সুপারশপে বাড়তি ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে না

সুপারশপে কেনাকাটায় ক্রেতাদের আর অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হবে না। পণ্যের গায়ে যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) লেখা থাকবে, সেটাই চূড়ান্ত দাম হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। সুপারশপ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এনবিআর নির্দেশনা জারি করেছে। ৯ জানুয়ারি এনবিআরের মূসক আইন ও বিধি শাখা থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়ে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। সুপারশপগুলোর ক্ষেত্রেও এই হার প্রযোজ্য হবে বলে জানানো হয়।

সূত্রমতে, এতদিন ধরে সুপারশপে কেনাকাটা করার সময় বিভিন্ন হারে ভ্যাট আরোপ করা হতো—কখনো দেড় শতাংশ, কখনো ২ শতাংশ, আবার কখনো ৫ শতাংশ। সর্বশেষ বাজেটে সুপারশপের কেনাকাটায় সাড়ে শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়। এ বিষয়ে চেইন সুপারশপের মালিকরা কিছুদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন এবং এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক দফায় আলোচনা করেছেন।

সুপারশপ মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সুপারমার্কেটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় ভ্যাটের হার কমানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে সুপারশপের প্রতিনিধিরা তিনটি সুনির্দিষ্ট ক্রেতাবান্ধব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এনবিআরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রস্তাবগুলি বিবেচনায় নেন এবং তাঁরা ভ্যাটের যে আদর্শ পদ্ধতি রয়েছে তা অনুসরণের পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, ভ্যাটের স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে ১৫ শতাংশ মূসক পরিশোধ করে ক্রয়ের ওপর রেয়াত গ্রহণ করা। সেই নীতি অনুসারে সুপারশপগুলো যদি ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করে, তাহলে তারা অন্যান্য নিয়ম মেনে সহজেই ভ্যাট রেয়াত নিতে পারবে। এই পদ্ধতিতে ক্রেতাদের বাজার করার পর সেই অতিরিক্ত ৫ শতাংশ বা বর্তমানে কার্যকর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আর দিতে হবে না। পণ্য মূল্যের মধ্যেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটির বাস্তবায়নে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা দু’পক্ষ আলোচনা করে নিরসনের জন্য সম্মত হন।

এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুপারশপের কেনাকাটার ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট তুলে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সুপারশপের মালিকদের তাদের পণ্যের গায়ে লেখা এমআরপি মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হবে। আর এমআরপি মূল্যের মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সুপারশপের মালিকেরা নিজেদের মূল্য সংযোজনের অংশের ভ্যাট দেবেন। আগের পর্যায় থেকে ভ্যাট রেয়াত নেবেন। উৎপাদন পর্যায়ে যেসব পণ্যে ভ্যাট নেই, সেগুলোর ক্ষেত্রে সুপারশপের মালিকেরা ভ্যাট দেবেন না। আটা, ময়দা, আদা ইত্যাদি পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট নেই।

এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ১৫ শতাংশ ভ্যাট হলে তা খুচরা মূল্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সুপারশপের মালিকদের ভ্যাট রেয়াত নেওয়া সহজ হবে। তবে এ জন্য সুপারশপের মালিকদের ভ্যাটের চালান দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হবে।

সুপারশপের মালিকদের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে ৭ শতাংশ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলে পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হয়। কিন্তু ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য সংযোজন হয় ৩৩ শতাংশ। তবে সুপারশপে বিক্রি করা মুদি পণ্যের ক্ষেত্রে ১৫-২০ শতাংশের বেশি মূল্য সংযোজন সম্ভব হয় না।

এ প্রসঙ্গে স্বপ্ন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি বিশাল চাপের মধ্যে আছে। আমি মনে করি, ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে মর্যাদার সাথে নিরাপদ, পুষ্টিমানসম্মত খাদ্য ও অনান্য নিত্যপণ্য কেনার অধিকার আপামর জনগণ সবার। আগে ৫ শতাংশ যে ভ্যাট ছিল সুপারশপে, সেটা সবার জন্য বাড়তি একটা খরচ ছিল। এখন সেই অতিরিক্ত খরচ আর থাকবে না। আশা করছি, এতে করে বাজার ব্যবস্থায় একটা সমতা আসবে।’’ সাব্বির নাসির আরও বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এনবিআর এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ভ্যাট বৈষম্যের বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। স্বপ্নে এখন থেকে ক্রেতাদের সেই ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে না। এ সাফল্য আপনার, আমার, আমাদের, সবার, সারা দেশের। কষ্টের টাকায় শ্রেষ্ঠ বাজার—এই স্লোগান এখন যথার্থভাবে বাস্তবায়ন হতে চলেছে।’

এনবিআর সূত্রমতে, প্রতিবছর সুপারশপ খাত থেকে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকার ভ্যাট সংগ্রহ করে এনবিআর। সুপারশপ মালিকদের দাবি, যদি খুচরা মূল্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং সঠিক নিয়মে বেচাকেনা হয়—তবে সুপারশপ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে নিত্যপণ্যের খুচরা বাজারের আকার প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। তিন বছর আগে সুপারশপের অংশ ছিল দেড় শতাংশের কম, যা এখন বেড়ে ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। সুপারশপ ব্যবসার দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। বর্তমানে দেশে দেড় হাজারের বেশি সুপারশপ রয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৬০০টি চেইন সুপারশপ। পাঁচ বছর আগে সুপারশপের সংখ্যা ছিল কয়েকশ। দেশের বড় চেইন সুপারশপগুলোর মধ্যে রয়েছে আগোরা, স্বপ্ন, মীনা বাজার, ডেইলি শপিং, ইউনিমার্ট, আলমাস, প্রিন্স বাজার, ডেইলি সুপারশপ ইত্যাদি। সুপারশপগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে স্বপ্ন, যার সারা দেশে ৪৪০টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।

**ভ্যাটযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে
**বেশি দামে সিগারেট বিক্রি, মীনা বাজারকে জরিমানা
**ভুয়া সিলে পণ্য বিপণন, ‘স্বপ্নকে’ জরিমানা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!