জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, আন্দোলনে জড়িত থাকা এবং সীমালঙ্ঘনকারী কর্মকর্তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা হবে। তবে বাকিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, যদি তাঁরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন। সোমবার (৭ জুলাই) বিকালে রাজধানীর ঢাকা কাস্টম হাউসের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় এনবিআর সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য ড. আল আমিন প্রামাণিক, ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন, অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলন ঘিরে যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে-তা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই যে, এর জন্যই তাদের কাছে চলে এলাম; তাদেরকে অভয় দেওয়ার জন্য। প্রত্যেকে যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক সম্পন্ন করে, তাহলে আমি মনে করি না যে তাদের ভয়ের কোনো কারণ আছে। আর কেউ কেউ হয়ত একটু…একটু না অনেক বড় আকারেই, যেটা আমরা বলব সীমালঙ্ঘন করেছে, সেটা হয়ত ভিন্নভাবে দেখা হবে। তবে সাধারণভাবে আমার মনে হয় না যে কারো কোনো ভয়ের কারণ আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমিসহ আমরা যারা এখানে আছি, আমরা কেউই অপরিহার্য নই। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র অপরিহার্য। আমাদের কাস্টম হাউজ ঢাকা অপরিহার্য; কাস্টম হাউজ চিটাগং অপরিহার্য; কাস্টম হাউজ বেনাপোল, কাস্টম হাউজ মোংলা, প্রত্যেকটা শুল্ক স্টেশন অপরিহার্য। রাজস্ব আহরণের যতগুলো দপ্তর আছে, ট্যাক্সেস অফিস, ভ্যাট কমিশনারেট আছে, এগুলো প্রত্যেকটাই অপরিহার্য। তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখাটা অপরিহার্য; এর কোনো বিকল্প নাই। কারা কাজ করবে, সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এগুলোর অপারেশন কোনোভাবেই যেন হ্যাম্পার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি।’
গত ৩০ জুন আপনি শান্তিপূর্ণ পরিবেশের আশ্বাস দিয়েছিলেন, দুদিন পর কয়েকটা আদেশ এসেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কিছু কিছু বিষয় আছে সেগুলো সরকারের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এটা আপনাদের বুঝতে হবে। ‘ওই খানে কি মাত্র পাঁচজন গিয়েছিল মাত্র, আন্দোলনে কি মাত্র পাঁচজন সম্পৃক্ত ছিল’? প্রশ্ন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। জবাব আসে আরও অনেক উপস্থিত ছিলেন। ‘তাহলে আমি যেটা আশ্বাস দিয়েছি সেটা তো ঠিকই আছে। যদি তাই হতো.. আমরা যদি ওরকম… তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতো। সেরকম কিছুতো হয়নি’, যোগ করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তিন লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত এটা আদায় হয়েছে। এটা আরও বাড়বে। সরকারি প্রকল্পে অ্যাডজাস্টমেন্টগুলো নরমালি এক-দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়। তাতে আমার ধারণা এটা আরও বাড়বে।
নতুন বছরে আমরা নতুন উদ্যোমে কাজ করবো জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশন আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। আমি কর্মকর্তাদের বলেছি এখানে যেন ব্যবসায়ীরা বিড়ম্বনার শিকার না হন। তিনি বলেন, কাস্টমস হাউসের অপারেশন পরিদর্শন করেছি। প্রত্যেকেই জানিয়েছে সবাই ভালোভাবে কাজ চলছে। কাস্টমস হাউসের অপারেশন ভালোভাবে চলছে। আমাদের সবার ওপরে দেশ। প্রত্যেকে রাষ্ট্র স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবো। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ যদি রাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করে আমরা রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেবো।
এর আগে দুপুরে চেয়ারম্যান আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স, এক্সপ্রেস সার্ভিস ইউনিট ও ঢাকা কাস্টম হাউসের লং রুমের শুল্কায়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। লং রুমে বিভিন্ন শুল্কায়ন গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কাস্টমসের কার্যাবলি ও তাঁরা কোন সমস্যা অনুভব করেন কি না-সেই বিষয়ে জানতে চান। ইন্টারনেট সার্ভার সমস্যার বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে কাস্টমসের আইটি বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করেন। আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে পরে থাকা পণ্যের দ্রুত নিষ্পত্তিকল্পে পরামর্শ প্রদান করেন। একইসাথে বিমান দ্বারা আনীত পণ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত খালাসের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানের নির্দেশনা দেন। এসময়ে বিমান বাংলাদেশ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার জানান, বর্তমানে বিমান ও কাস্টমসের সমন্বিত কার্যক্রমের কারণে পণ্য জট অনেক সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এক্সপ্রেস সার্ভিস ইউনিটের পণ্য দ্রুত খালাসে পণ্যের সঠিক স্ক্যানিং এর ওপর জোর দিতে বলেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় করেন। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শ্রমিক ও আমদানিকারকের প্রতিনিধির সাথে তাদের কোন সমস্যা রয়েছে কি না-তা জানতে চান ও সমাধানকল্পে পরামর্শ প্রদান করেন।
চেয়ারম্যান অনলাইনভিত্তিক ট্যাক্স প্রদান কার্যক্রম এ-চালানের মাধ্যমে জমা দেয়ার প্রক্রিয়া উদ্বোধন করেন। এছাড়া প্রবাসীদের পণ্য আনার ক্ষেত্রে সুবিধার জন্য ‘ব্যাগেজ ট্যাক্স সফটওয়্যার’ ও আটককৃত পণ্যের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘ডিএম সফটওয়্যার’ উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, কাস্টমস হাউসসমূহ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের কেন্দ্র-বিন্দু। একইসাথে যেন ব্যবসায়ীদের কোন বিড়ম্বনা না হয়, বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রীরা যেন কোনরূপ হয়রানি না হয়-সেই বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি আশ্বস্ত করেন, যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সততা-দক্ষতা ও সচেষ্টতার সাথে দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন তাদের কোন ভয় নেই। একইসাথে দেশ ও রাষ্ট্রকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বন্দরের কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে আন্দোলনে নেমেছে। এর মধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।