সিটি সুগারের ২৮০ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি

সিটি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান

দেশের স্বনামধন্য সিটি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল অবৈধ অপসারণের মাধ্যমে প্রায় ২৮০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি বন্ড রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ এবং শুল্ক পরিশোধ না করে বন্ডের কাঁচামাল অপসারণ করে শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ টীম পরিদর্শনের পর এ মামলা করে। সম্প্রতি (৩০ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানো ও ফাঁকিকৃত শুল্ক পরিশোধে দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মেসার্স সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড স্বনামধন্য সিটি গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উত্তর রূপসী এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির ফ্যাক্টরি। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বন্ড লাইন্সেস নং-৩২৭। প্রতিষ্ঠানটি বন্ডের আওতায় বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি (র’ সুগার) কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করে পরিশোধনের (রিফাইনারি) মাধ্যমে বাজারজাত করে। যা তীর চিনি নামে পরিচিত। সম্প্রতি অভিযোগ উঠে প্রতিষ্ঠানটি বন্ড রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ এবং শুল্ক পরিশোধ না করে ফ্যাক্টরি থেকে কাঁচামাল অপসারণ করেছে। অর্থাৎ শুল্ক পরিশোধ না করেই প্রতিষ্ঠানটির বন্ডের কাঁচামাল ব্যবহার করেছে। বন্ডের নিয়ম হলো, শুল্কমুক্ত কাঁচামাল বন্দর থেকে ফ্যাক্টরিতে এনে ৬ মাস রাখতে হবে। ৬ মাস পর শুল্ক পরিশোধ করে ব্যবহার করতে হবে। এর আগে ব্যবহার করলে শুল্ক পরিশোধ এবং বন্ড কমিশনারেটকে জানাতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক পরিশোধ না করে ৬ মাসের আগেই অবৈধভাবে কাঁচামাল অপসারণ করে ব্যবহার করে। যা শুল্ক আইনে শুল্ক ফাঁকি বলে উল্লেখ রয়েছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে।

অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৩ নভেম্বর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ টীম ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে সত্যতা পায়। প্রিভেন্টিভ টীমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানিকৃত ২০১,৯০০.৯৭০ মেট্রিক টন কাঁচামাল বন্ড রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ রয়েছে। যার শুল্কায়ন যোগ্য মূল্য ৬১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৬ টাকা ৭২ পয়সা। যার মধ্যে সিডি (আমদানি শুল্ক), আরডি (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) ও ভ্যাটসহ (মূসক) মোট শুল্ককর ২৭৯ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৫ টাকা ৬২ পয়সা। এরমধ্যে সিডি ৪০ কোটি ৩৮ লাখ ১ হাজার ৯৪০ টাকা, আরডি ১২২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩৩৯ টাকা ২৫ পয়সা ও ভ্যাট ১১৬ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৯ টাকা ৩৭ পয়সা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক পরিশোধ না করেই কাঁচামাল অপসারণ করেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ৫৮টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এসব কাঁচামাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক পরিশোধ না করে কাঁচামাল অপসারণ করে দি কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ এর ধারা ১৩(১) এর বন্ড লাইন্সেস শর্তসমূহ ও ধারা ৩২, ৮৬, ৯৭ ও ১১৭ এর বিধান এবং বন্ডেড ওয়্যার হাউজ লাইন্সেসিং বিধিমালা, ২০০৮ লঙ্গণ করেছে। কাস্টমস আইন ১৯৬৯ এর ১১১ ধারা অনুযায়ী এসব কাঁচামালের ওপর ২৭৯ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৫ টাকা ৬২ পয়সার শুল্ক আদায়যোগ্য। এ শুল্ক পরিশোধ এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দন্ডারোপমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে জবাব দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে এবং সন্তোষজনক জবাব না দিলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস বার্তাকে বলেন, নিয়ম হলো বন্দর থেকে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল নিয়ে আসার পর ফ্যাক্টরি ৬ মাস রাখতে হবে। ৬ মাস পর শুল্ক পরিশোধ করে ব্যবহার করবেন। এর আগে ব্যবহার করতে হলে শুল্ক পরিশোধ ও বন্ড কমিশনারেটকে জানাতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক পরিশোধ না করে ৬ মাসের আগে ব্যবহার বা অপসারণ করেছে। যা অবৈধ অপসারণ বা শুল্ক ফাঁকি বলে গণ্য হবে। তিনি বলেন, শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানো ও দাবিনামা জারি করা হয়েছে। সময় মতো জবাব না দিলে এবং সন্তোষজনক জবাব না হলে এ ফাঁকির দন্ড হতে পারে কাঁচামালের মোট মূল্যের ৫ গুণ।

এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) বিশ্বজিৎ সাহা বিজনেস বার্তাকে বলেন, সিটি গ্রুপ কোন দিন এমন কাজ করে না। ফাঁকির তো প্রশ্নই আসে না। বন্ড কমিশনারেট থেকে এ ধরনের কোন চিঠি আমরা পাইনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!