বার্তা প্রতিবেদক: দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর চারটার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান ফজলুর রহমান। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ফজলুর রহমান রোববার অফিস করেছেন। আজ ভোরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবার সূত্র জানিয়েছে, আজ বাদ আসর গেন্ডারিয়া ধূপখোলা মাঠে ফজলুর রহমানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েকে রেখে গেছেন ফজলুর রহমান।
১১ ভাই-বোনের মধ্যে ফজলুর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। কিশোর বয়সে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় নিজেদের বসতবাড়ির আঙিনায় মাত্র ৪২ টাকা পুঁজিতে একটি মুদিদোকান খুলে ব্যবসা জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সদ্য স্বাধীন দেশে ফজলুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন সরিষার তেল উৎপাদনের কারখানা সিটি অয়েল মিল, যা পরে সিটি গ্রুপের রূপ নেয়। শুরুর দিকটা কঠিন হলেও ধীরে ধীরে বাজারে ভালো অবস্থান তৈরি করে সেই কোম্পানি। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে সিটি গ্রুপ সয়াবিন তেল আমদানি করে পরিশোধনের পর দেশে বিক্রি শুরু করে।
এরপর এ কোম্পানির ব্যবসার দ্রুত সম্প্রসারণ হতে থাকে। ১৯৯৫ সালে তীর ব্র্যান্ডের অধীনে আটা, ময়দা, সুজি উৎপাদন শুরু করে সিটি গ্রুপ। ভোজ্যতেল ও চিনি পরিশোধন, চাল-ডাল, আটা-ময়দা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পোলট্রি খাদ্য, জাহাজ নির্মাণ, চা–বাগান, ব্যাংক, বিমা, হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে সিটি গ্রুপের ব্যবসা রয়েছে।
২০১৮ সালে এ কোম্পানি নারায়ণগঞ্জে ৭৮ একর জমির ওপর সিটি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার অনুমোদন পায়।বর্তমানে এ শিল্পগোষ্ঠীটির অধীনে ৪০টির বেশি কোম্পনি রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। সিটি গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ভারত, কম্বোডিয়া ও নেপালে ময়দা, তেলসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে সিটি গ্রুপ।
২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, তখন সিটি গ্রুপের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল ৩৫টি। বর্তমানে এই শিল্পগোষ্ঠীর অধীনে ৪০টির বেশি কোম্পানি রয়েছে, বিনিয়োগ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। কর্মসংস্থান ২৫ হাজারের বেশি। বার্ষিক বেচাকেনা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে। ফজলুর রহমান একাধিকার সেরা প্রবীণ করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরেও তিনি সেরা প্রবীণ করদাতা নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি এশিয়া ওয়ান ‘গ্রেটেস্ট লিডার ২০২০-২১’ সম্মানে ভূষিত হন।