সাড়ে ৫ টন পণ্য আসার কথা, কন্টেইনার এসেছে খালি

  • ## সিগারেট আমদানির গোপন তথ্যে ২০২১ সালের অক্টোবরে কন্টেইনারটি লক দেয় কাস্টমস গোয়েন্দা
  • ## আমদানিকারকের ঘোষণা ছিলো-কফিমেট, চকোলেট, কোকোয়া পাউডার, মিনারেল ওয়াটার ও বিনস

বার্তা প্রতিবেদক: কন্টেইনার ভর্তি সিগারেট আমদানি হয়েছে-এমন গোপন তথ্যে কন্টেইনার লক দেয়া হয়। বিল অব এন্ট্রি দাখিল ও কন্টেইনার খুলে দেখাতে গড়িমসি করে আমদানিকারক। পরে ভুয়া একটি বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়। যাতে কফিমেট,  চকোলেট, কোকোয়া পাউডার, মিনারেল ওয়াটার ও বিনস আমদানির ঘোষণা ছিলো। কন্টেইনারটি ফোর্স কিপ ডাউন দিয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অবাক হন। কারণ অ্যাসাইকুডার লক নাম্বার আর কন্টেইনারের লক নাম্বার একই না। আবারো আমদানিকারকের গড়িমসি।

শেষে দ্বিতীয়বার ফোর্স কিপ ডাউনে কন্টেইনার খুলে দেখা গেলো, কন্টেইনারের ভেতর সিগারেট তো নেই। এমনকি আমদানিকারকের ঘোষিত সেই ৫ দশমিক ৬ টন পণ্যও নেই। কন্টেইনারের ভেতর পাওয়া গেছে কাঠ, প্লাস্টিক ও সোলারের কয়েকটি ক্যারেট। রাজধানীর অদূরে পানগাঁও কাস্টম হাউসে এমন একটি খালি কন্টেইনার পেয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের ধারণা, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি চক্রের যোগসাজসে সিগারেট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া পণ্য আমদানির আড়ালে অর্থপাচার করেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

Pangao Custom

কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর অদূরে পানগাঁও কাস্টম হাউসে এমএক্সসিইউ-০০৩১৯৩২২জি১ নাম্বারের ২০ ফিট উচ্চতার একটি কন্টেইনার আসে। ওই কন্টেইনারে পণ্যের আড়ালে বিপুল পরিমাণ সিগারেট আমদানি করা হয়েছে-এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ওই বছরের ৩ অক্টোবর অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে তা লক করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জম জম করপোরেশনকে বিল অব এন্ট্রি দাখিল ও কন্টেইনার খুলে পণ্য দেখাতে বলা হলে তারা গড়িমসি করে। পরে আমদানিকারকের প্রতিনিধি এমএস প্রোসিয়া নামের সিএন্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে অন্য একটি বিল অব এন্ট্রি কাস্টমস গোয়েন্দায় দাখিল করেন (বিল অব এন্ট্রি নং-সি ২১৮৯)। ওই বিল অব এন্ট্রিতে আমদানিকারকের ঘোষণা ছিলো, সিঙ্গাপুর হতে ওই কন্টেইনারে ৫ দশমিক ৬ টন ওজনের কফিমেট, চকোলেট, কোকোয়া পাউডার, মিনারেল ওয়াটার ও বিনস আমদানি করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আমদানিকারককে ফোর্স কিপ ডাউন দেয়া হলে তারা কন্টেইনার খুলতে রাজি হয়। ওই দিন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কন্টেইনারের কাছে গিয়ে দেখতে পান যে, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে দেয়া লক আর কন্টেইনারের লক নাম্বার একই না। লক নাম্বারে গরমিল থাকায় ওই দিন কন্টেইনার আর খোলা হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) ওই কন্টেইনারটি আবারো ফোর্স কিপ ডাউন দেয়া হয়। পরে কাস্টমস কর্মকর্তা, আমদানিকারকের প্রতিনিধি, বন্দর প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে কন্টেইনার খোলা হয়। তবে কন্টেইনার খুলে ভেতরে আমদানিকারকের ঘোষিত পণ্য বা সিগারেট কিছুই পাওয়া যায়নি। কন্টেইনারের ভেতরে কয়েকটি খালি কাঠ, প্লাস্টিক ও সোলারের ক্যারেট পাওয়া গেছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাখিল করা বিল অব এন্ট্রি অনুযায়ী আমদানি করা পণ্যের ইনভয়েস ভ্যালু দেখানো হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ডলার। যাতে শুল্ককরসহ মোট মূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা। কন্টেইনার বন্দরে আসার পরপরই কাস্টমস গোয়েন্দার তৎপরতা দেখে একটি চক্র সিগারেট সরিয়ে ফেলেছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কারণ আমদানিকারককে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেনি। এছাড়া পণ্য অ্যাসাইকুডায় দেয়া লক নাম্বার আর কন্টেইনারের লক নাম্বার একই পাওয়া যায়নি। এতে ধারণা করা হচ্ছে, লক কেটে পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে কন্টেইনারে অন্য একটি লক লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আমদানির আড়ালে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অর্থপাচার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!