গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বর্তমান ঘনমিটারপ্রতি ১৬ টাকা থেকে তা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার আবেদন করেছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে। এ প্রস্তাবটি গত ১০ আগস্ট জমা দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ অক্টোবর।
এর আগে গত ২৮ জুলাই এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি বিভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়। গ্যাসের দাম বাড়লে সারের দামও স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এই বাড়তি ব্যয় শেষ পর্যন্ত কৃষকদের ওপর পড়বে, না হলে সরকারকে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দাম বাড়ানো হলে সার উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
দেশে ছয়টি সার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরোনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি। তাই কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য পাঁচ সার কারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২৫ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে ৬.৬ কোটি ঘনফুট। দেশে বছরে সারের মোট চাহিদা প্রায় ৬৯ লাখ টন, চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি করা হয়।
পেট্রোবাংলা বলছে, কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব অনুসারে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে ছয় মাস পুরোমাত্রায় (২৫ কোটি ঘনফুট) গ্যাস দেওয়া হবে। বাকি ছয় মাসের মধ্যে এপ্রিল-মে ১৬.৫ কোটি, জুনে ১৭.৫ কোটি এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ১০৮ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। দাম সমন্বয় করা হলে অতিরিক্ত আরও ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুযায়ী, মোট ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানিতে খরচ হবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। দাম বাড়ানো হলে আয় দাঁড়াবে ৪৪ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা, তবুও ঘাটতি থেকে যাবে আট হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। সরকারের ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি যোগ করলে ঘাটতি নেমে আসবে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়। বর্তমানে ঘনমিটারপ্রতি গ্যাসের খরচ ২৮.৭৮ টাকা, আর দাম বাড়ানো হলে গড় বিক্রয়মূল্য হবে ২৪.৫৬ টাকা, ফলে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ৪.২২ টাকার ঘাটতি থেকে যাবে।
বিসিআইসি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, গ্যাসের দাম নিয়ে কমিটি কাজ করছে। সেখানে শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। গ্যাসের দাম বাড়লে সার উৎপাদনে যে বাড়তি টাকা লাগবে তা সরকার দেবে।
বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, এখন প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের উৎপাদন খরচ ৩৮ টাকা। ডিলারদের কাছে তা বিক্রি করা হয় ২৫ টাকায়। সরকার কেজিপ্রতি ১৩ টাকা ভর্তুকি দেয়। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ২৭ টাকায়। সূত্র আরও জানায়, গ্যাসের দাম ৪০ টাকা করা হলে সারের দাম পড়বে প্রায় ৫৬ টাকা।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে সার, কৃষি, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।