সাবেক এমপি-মন্ত্রিদের বিদেশে ৫৮২ ফ্ল্যাট চিহ্নিত

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী সুবিধাভোগীরা দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। শুধু বিদেশেই তাদের নামে ৫৮২টি ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্থাপনা চিহ্নিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে ২৩টি কোম্পানির অধীনে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪৭৪ ডলার এবং ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৪৮০ ইউরো। দেশে তাদের রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের দেশ-বিদেশে প্রায় ১০,৪৭৬ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনা হয়েছে। দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত ৭৪টি আদেশে এসব সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করেছেন। দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১০,৩১০ কোটি ২৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৭১ টাকা এবং বিদেশে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও জব্দ করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দুদক দলটির বিভিন্ন নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর এসব সম্পদ চিহ্নিত করে আদালতের মাধ্যমে জব্দ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আদালতের ৫৫টি আদেশের মাধ্যমে ক্রোককৃত স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ১৯১ একর জমি। যার বাজারমূল্য ৬৯০ কোটি ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ১১২ টাকা। এছাড়া ২৮টি বাড়ি ও ৩৮টি ফ্ল্যাট ক্রোক করা হয়েছে। এগুলোর বাজারমূল্য ৬১ কোটি ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ৪০৯ টাকা। এছাড়া ১৫টি প্লট, ৬টি দোকান, ২৩টি গাড়ি, একটি ট্রাক, ৩টি জাহাজ, তিনটি কোম্পানি ও ৫২টি বাণিজ্যিক সংগঠন ক্রোক করা হয়েছে।

এবং আদালতের ৫৪টি আদেশে অবরুদ্ধ করা অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১,০৩০টি ব্যাংক হিসাব, যার স্থিতি ৮১৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ২৭৯ টাকা। এছাড়া ১৪৮ লাখ ১২ হাজার ৯৬ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৮ হাজার ৭১৩ কোটি ৭৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৬০ টাকার কোম্পানি শেয়ার এবং নগদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। অবরুদ্ধ তালিকায় আরও রয়েছে ৬৬০ দশমিক ৩ গ্রাম স্বর্ণ, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৯টি বিও হিসাবের স্থিতি ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৩৮ টাকা, তিনটি বিমা পলিসির স্থিতি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকা, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার এবং ৫৫ হাজার ইউরো।

জানা যায়, এখন পর্যন্ত দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বেশি সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান (ছাগলকাণ্ডে আলোচিত), সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, যশোরের সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু। এছাড়া ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ অনেকেই এ তালিকায় আছেন।

দেশে মোট ৭৬৫ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮৯৮ টাকার স্থাবর এবং ৯ হাজার ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বিদেশে ১২০ কোটি ৪৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৮ টাকার স্থাবর এবং ৪৫ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৪২৯ টাকার অস্থাবর সম্পদও ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব সম্পদের মালিকানা পতিত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি, ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দুদক এদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে কেনা এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য নিশ্চিত করতে বিএফআইইউ, এনবিআর ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেয় দুদক। এখন পর্যন্ত যাদের সম্পদের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং আদালতের আদেশে তাদের সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

**সাবেক ২৪ এমপি-মন্ত্রীর দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!