আন্তর্বর্তী সরকার সাবেক সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিদেশি নাগরিকত্বের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে থাকা এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যে কারা বিদেশি নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড ধারণ করেন, তা জানার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপি ছিলেন, এমন ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং কারো কারো গ্রিন কার্ড থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি এমপি বা মন্ত্রী হতে পারবেন না।কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের অনেকেই এই আইনের তোয়াক্কা করেননি।
দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তিদের সংখ্যা জানার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিদেশি নাগরিকত্ব গোপন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীতে মন্ত্রী-এমপি হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ মিশন-দূতাবাসের সহযোগিতা প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ১৮৮টি দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস-মিশনে চিঠি পাঠানো হবে।
সাবেক এসব এমপির কারো বিদেশি নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড থাকার প্রমাণ মিললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গোপনে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বেলজিয়ামের ‘রেসিডেন্স কার্ড’ রয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যুক্তরাজ্যের নাগরিক। সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও জুনাইদ আহমেদ পলকের যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড রয়েছে।দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মাহবুব আলীরও যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল থাকে, তবে সরকারি চাকরি বা সংসদ সদস্য হতে হলে বিদেশি নাগরিকত্ব থাকতে পারবে না। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের মূল লক্ষ্য হলো বিদেশি নাগরিকত্ব গোপন করে যারা এমপি বা মন্ত্রী হয়েছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা এবং পরবর্তী সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।