সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটপাটের অভিযোগের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যদিও দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে সাদাপাথরে লুটপাটের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, সেখানে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগের কথা বলা হয়েছে।
সোমবার রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। একই সঙ্গে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং বিএনপির নীতি–আদর্শবিরোধী অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের সব পদ স্থগিত করা হয়েছে। তাঁর স্থানে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাজী আবদুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।
বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ ওঠে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ স্থানীয় প্রশাসন সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযান চালায়। অভিযানে প্রায় ৭০ একর জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় ছোট-বড় ১০০টি পাথর ভাঙার (স্টোন ক্রাশার) যন্ত্র অপসারণের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর ভেঙে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ১৯ মার্চ কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের অভিযোগে সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় জেলা বিএনপি। একই সঙ্গে অভিযোগ তদন্তের জন্য জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা বিএনপির একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ এপ্রিল তদন্ত কমিটি ভোলাগঞ্জের পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি জমি দখল ও লুটপাটের ঘটনায় বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে আরও বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হবে, তা কল্পনাতীত। এ ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি নেতৃত্বের মর্যাদা চরমভাবে অবমানিত হয়েছে।
ওই নেতার পদ স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—চাঁদাবাজি, দখলবাজি বা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত কেউ বিএনপিতে থাকতে পারবে না। একই সঙ্গে বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ যাতে অপকর্ম বা লুটপাট করতে না পারে, সে বিষয়ে আগেই প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছিল। স্থানীয় পর্যায় থেকেও সাদাপাথর লুটপাটের তথ্য প্রশাসনকে জানানো হয়। তবে প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।