সাড়ে ৮ হাজার কোটি খরচ, আসেনি এক ফোঁটাও তেল

মাতারবাড়ীতে ৮,৫৫৫ কোটি টাকার জ্বালানি খালাস প্রকল্পের কাজ ১১ মাস আগে শেষ হলেও পরিচালনা সংস্থা না থাকায় এখনো তেল আনা সম্ভব হয়নি। স্টোরেজ ও ২৫০ কিলোমিটারের পাইপলাইন ব্যবহারের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অপারেটর নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে।

সাগরে নৌ-চ্যানেলের গভীরতা কম হওয়ায় চট্টগ্রামে রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) ভিড়তে পারে না জ্বালানিবাহী ট্যাঙ্কার। মহেশখালীর কাছাকাছি গভীর সাগরে নোঙর করা এসব মাদার ভেসেল থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল তাই লাইটারেজে (ছোট জাহাজ) করে আনা হয় ইআরএলে। এতে তেল খালাস ও পরিবহনে সময়ক্ষেপণ যেমন হয়, অপচয়ও হয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ২০১৮ সালে মহেশখালীতে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। জানানো হয়, এটি চালু হলে ১০ থেকে ১২ দিনের পরিবর্তে মাত্র দু’দিনেই মাদার ভেসেল থেকে তেল খালাস করা যাবে। বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা।

চীনের ঋণ সহায়তায় এ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে নির্মাণ করা হয়েছে দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার ছয়টি স্টোরেজ। এতে দেশের আড়াই মাসের চাহিদার সমান বাড়তি তেল মজুত করা যাবে। ১৬ কিলোমিটার গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে বয়া। এ ছাড়া স্টোরেজ ট্যাঙ্ক থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইআরএল পর্যন্ত সমুদ্র তলদেশ ও স্থল মিলিয়ে টানা হয়েছে ২২০ কিলোমিটারের পৃথক দুটি পাইপলাইন। এ দুই পাইপলাইনের মাধ্যমে মাদার ট্যাঙ্কার থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মহেশখালী হয়ে সরাসরি ইআরএলে আসার কথা।

প্রকল্পটির কাজ শেষে গত বছরের মার্চে কমিশনিং করা হয়। এর ৫ মাস পর আগস্টে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। তবে ছয় মাস পার হলেও দেশে এই ধরনের ইনস্টলেশন পরিচালনায় সক্ষম লোকবল না থাকায় অলস পড়ে রয়েছে বিপুল ব্যয়ের স্থাপনাগুলো।

এর মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পটিতে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক তেল খালাস কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সৌদি আরব থেকে আসা একটি জাহাজ থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চেষ্টাও করা হয়। তবে বড় একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে তখন মহেশখালীর স্টোরেজে তেল আনা যায়নি। এর পরপরই সেই ত্রুটি সারানো হলেও পরিচালনা সংস্থা না থাকায় এটি চালু করা যায়নি। অথচ প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল টাকা ব্যয় হচ্ছে সরকারের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ করার সঙ্গে সংগতি রেখে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না করায় এত টাকা ব্যয়ের সুফল মিলছে না। এ ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই। ফলে সুফল পেতে হলে দ্রুত জ্বালানি খালাস ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিদেশি অপারেটরদের সঙ্গে এখানে দেশের লোকজনও কাজ করবে। তারা কাজটি রপ্ত করার পর নিজেরাই এটি পরিচালনা করবে।

বিপিসি ও ইআরএল সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাস ও সঞ্চালনের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিতে আগ্রহী, যা জি-টু-জি ভিত্তিতে করার চেষ্টা চলছে।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসপিএম প্রকল্প পরিচালক শরীফ হাসনাত জানান, দেশীয় অভিজ্ঞ অপারেটর না থাকায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত অপারেটর নিয়োগ করে তেল খালাস ও সঞ্চালন শুরু করা হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!