শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে ২৫৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। মামলাটি করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন। এর আগে সোমবার (১৬ জুন) আদালত সাকিবসহ অভিযুক্ত ১৫ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা একে অপরের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অসৎ উদ্দেশ্যে দ্রুত আর্থিক লাভের আশায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট প্রচলিত আইন (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর ১৭ ধারা) লঙ্ঘন করেন। তারা নিজেদের বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অসাধু, অবৈধ ও অনৈতিকভাবে একাধিক লেনদেনের মাধ্যমে বাজারে কারসাজি চালান। ফটকা ব্যবসা, জুয়া ও গুজব ছড়িয়ে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এজাহারে আরও উল্লেখ হয়, আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারে ধারাবাহিকভাবে কেনাবেচার মাধ্যমে কৃত্রিম দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তারা শেয়ারবাজার থেকে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎ করেন এবং অস্বাভাবিক রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে ‘প্রসিড অব ক্রাইম’ হিসেবে সেই অর্থ উত্তোলন করেন।
এজাহারে সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, আসামি মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরুর কারসাজির শিকার তিনটি কোম্পানি—প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ও সোনালী পেপারস লিমিটেড—এর শেয়ারে সাকিব বিনিয়োগ করেন এবং ওই কারসাজিতে অংশ নেন। তিনি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন এবং ‘রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইন’ নামে ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেন।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, সাকিব তিনটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন, যেখানে বাজার কারসাজি হয়েছে এবং তিনি এ তৎপরতায় জড়িত ছিলেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন—সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ুন কবির এবং তানভির নিজাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি আবুল খায়ের হিরু তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত ২১ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপন করে ‘লায়ারিং’-এর মাধ্যমে তা বিভিন্ন খাতে সরিয়ে দেন। এছাড়া, তার নামে থাকা ১৭টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যও উঠে এসেছে। এ ঘটনায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ ধারা; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা; এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০(বি)/১০৯ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। উপপরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি দল তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।