ঘুষের শীর্ষে বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বিতীয়

বিবিএসের জরিপ

** বিআরটিএ-তে সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিয়েছেন ৬৩.২৯%
** আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ঘুষ দিয়েছেন ৬১.৯৪%, পাসপোর্টে ৫৭.৪৫%, ভূমি অফিসে ৫০% এর বেশি
** গত এক বছরে ঘুষ ও দুর্নীতির সম্মুখীন হয়েছেন ৩১% নাগরিক
** পুরুষদের মধ্যে ঘুষ দেয়ার হার ৩৮.৬২%, নারীদের মধ্যে ২২.৭১%
** হয়রানির শিকার ১৯.৩১%, যার প্রায় অর্ধেকই পরিবারে, এরপর গণপরিবহন/উন্মুক্ত স্থান ও কর্মক্ষেত্রে
** বিচার বা আইনগত সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ ভরসা রেখেছেন স্থানীয় বা অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থায়

গত এক বছরে যারা সরকারি সেবা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষের হার ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’ থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ পরিচালিত এই জরিপে দেশের ৬৪ জেলার ১ হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৮৪ হাজার ৮০৭ জন ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এতে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য সংক্রান্ত এসডিজি ১৬-এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। জাতিসংঘের নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান ও পদ্ধতি অনুসরণ করে জরিপের প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ। সেখানে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যেখানে এই হার ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা ঘুষ বা দুর্নীতির মুখোমুখি হয়েছেন।

গত দুই বছরে দেশের ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো ধরনের বিবাদ বা বিরোধের সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ ব্যক্তি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিকভাবে—যেমন আদালত বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে—বিচার পেয়েছেন। অপরদিকে, ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক উপায়ে—যেমন কমিউনিটি নেতা বা আইনজীবীর সহায়তায়—বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন।

জরিপ অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা পুরুষদের তুলনায় (১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ) কিছুটা বেশি। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার ২২ শতাংশ, যা গ্রামাঞ্চলের ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশের তুলনায় বেশি। বৈষম্য ও হয়রানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও লিঙ্গ। এসব ঘটনার মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ ঘটেছে নিজের পরিবারে, ৩১ দশমিক ৩০ শতাংশ গণপরিবহন বা উন্মুক্ত স্থানে, এবং ২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ কর্মস্থলে। তবে মাত্র ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!