সচিবালয়ে চলমান কর্মচারী আন্দোলনের মধ্যেই সরকার রোববার (২৫ মে) রাতে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে। এতে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করা হয়েছে। নতুন এই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর ‘অসদাচরণ’ প্রমাণিত হলে, কেবল নোটিশ জারির মাধ্যমে তাকে নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিত করা, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা বরখাস্ত করা যাবে। সংশোধিত আইনে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৩৭ ধারার সঙ্গে নতুন ৩৭(ক) ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ‘অসদাচরণ’ কী, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন ৩৭(ক) ধারায় ‘অসদাচরণ’ এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কোনো কাজে যুক্ত থাকলে যা অনানুগত্যের শামিল, বা অন্য কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য বা শৃঙ্খলাবিরোধী আচরণে প্ররোচিত করে, কিংবা কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টি করে—তাকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে। একইভাবে, যদি কোনো কর্মচারী যৌক্তিক কারণ বা অনুমোদিত ছাড়া এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে দায়িত্ব থেকে বিরত থাকেন বা অনুপস্থিত থাকেন, অথবা কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হন, সেটিও অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নতুন ধারায় আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো কর্মচারী অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে দায়িত্ব থেকে বিরত থাকতে, অনুপস্থিত থাকতে বা কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হতে প্ররোচিত করেন কিংবা বাধা দেন—তাহলেও তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এই ধরনের অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে নিম্নপদে বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিত করা, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা বরখাস্ত করার ক্ষমতা থাকবে সরকারের হাতে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এখন থেকে বিভাগীয় মামলা রুজু না করেও শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে। এতে বলা হয়েছে, অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে প্রথম কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। আর যদি অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তাহলে কেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না—সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে দ্বিতীয় নোটিশ জারি করতে হবে। এরপর ওই নোটিশের ভিত্তিতেই শাস্তি দেওয়া যাবে।
এই প্রক্রিয়ায় শাস্তি দেওয়া হলে, দোষী কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা যাবে না। তবে চাইলে ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার সুযোগ থাকবে।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগের দিন, শনিবারও তারা একই দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেন। তাদের দাবি, যতক্ষণ না অধ্যাদেশ বাতিল হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—অধ্যাদেশ প্রত্যাহার না হলে ভবিষ্যতে সচিবালয় অচল করে দেওয়াসহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।