যে সকল সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ আছে এবং সন্দেহভাজন সরকারি কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নিচ্ছে। সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে এনবিআরে ই-রিটার্ন সার্ভিস সেন্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ তিনি উল্লেখ করেন, সময় সবেমাত্র শুরু হয়েছে এবং প্রস্তুতির জন্য তাদের কিছুটা সময় প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আপনারা এই প্রস্তুতির গতিবিধি বাইরে থেকে দেখতে পাচ্ছেন না।’
চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, সরকারি কর্মচারীরা, বিশেষ করে আমলারা গত ১৫-২০ বছরে অবৈধভাবে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। এ রকম শত শত লোক রয়েছেন। আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এনবিআর ও সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এদের বিষয়ে ব্যাপক কাজ করেছিল। এবারও আমরা সে বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।
অপরদিকে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেছ উর রহমান সম্প্রতি জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে হয়। তবে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারীদের আটক করতে তাদের কাজ শুরুর সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করতে রাজি হননি এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে বিষয়গুলোকে সঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছি, আমরা এখন সঠিক জিনিসগুলো সঠিক জায়গায় রাখছি।’ এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষ এখন এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছে।
সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য সরকার একটি ফরম্যাট প্রস্তুত করেছে। কেউ সম্পদের বিবরণী জমা না দিলে বা ভুল তথ্য দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সম্পদ বিবরণী সিল করা খামে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (২০০২ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দাখিল করতে হয়। সরকারি কর্মচারীদের চাকরিতে যোগদানের সময় তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ঘোষণা করতে হবে এবং তারপর প্রতি পাঁচ বছর পর পর তা হালনাগাদ করতে হবে। দুর্নীতি কমাতে ও সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। মন্ত্রণালয়ের তরফে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হলেও এই বিধিমালা প্রয়োগের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতি নিয়ে চলমান উদ্বেগের আলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বার্ষিক সম্পদ বিবরণীর প্রয়োজনীয়তা জোরদার করেছে।
অন্যদিকে, গত ১৪ আগস্ট সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ সরকারি কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহত্তর জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে।
***