সরকারি উদ্যোগে শুরু হচ্ছে আইভি ফ্লুইড উৎপাদন

সরকারি হাসপাতালগুলোতে কম খরচে ইন্ট্রাভেনাস (আইভি) ফ্লুইড সরবরাহ এবং বেসরকারি সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে গোপালগঞ্জে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় বড় পরিসরে উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) পরিচালিত এ কারখানায় বছরে ২ কোটি ১৬ লাখ বোতল আইভি ফ্লুইড উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং চলতি মাসের শেষ দিকে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

আইভি ফ্লুইড হলো জীবাণুমুক্ত তরল দ্রবণ, যা সাধারণত ড্রিপের মাধ্যমে সরাসরি রোগীর শিরায় প্রয়োগ করা হয়। এর মাধ্যমে শরীরে তরল, ইলেক্ট্রোলাইট ও ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। যখন কোনো রোগী মুখে তরল বা ওষুধ গ্রহণ করতে অক্ষম হয়, তখন পানিশূন্যতা রোধ, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধ বা চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার উপযোগী স্যালাইনসহ বিভিন্ন ধরনের তরল আইভি ফ্লুইডের অন্তর্ভুক্ত। তবে দেশে আইভি ফ্লুইডের বার্ষিক চাহিদা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুর মৌসুমে আইভি ফ্লুইডের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রয়োজন হয় প্রায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ বোতল আইভি ফ্লুইড। শুধু সরকারি হাসপাতালের জন্যই এই ছয় মাসে প্রায় ৪৮ লাখ বোতল মজুত রাখা জরুরি হয়।

এসেনসিয়াল ড্রাগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এ সামাদ মৃধা জানান, কারখানাটি বর্তমানে চালু রয়েছে এবং সেখানে পরীক্ষামূলক উৎপাদন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন প্রয়োজন। এগুলো সম্পন্ন করে ১০–১৫ দিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো নরমাল স্যালাইন ও কলেরা স্যালাইন উৎপাদন শুরু করে সরকারের চাহিদা পূরণ করা যাবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে আরও বেশি ধরনের আইটেম উৎপাদন সম্ভব হবে।’

গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগসের (থার্ড প্ল্যান্ট) মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় শুধু ডেঙ্গুর জন্য আইভি ফ্লুইডই নয়; কলেরা স্যালাইন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ডেক্সট্রোজ, সিপ্রোসহ আরও ১৬ থেকে ১৮ ধরনের ফ্লুইড উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি, আমাদের উৎপাদিত আইভি ফ্লুইড সরকারি হাসপাতালগুলোর চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করবে।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে ১০০ মিলি, ৫০০ মিলি ও ১০০০ মিলির আইভি ফ্লুইড বোতলের পরীক্ষামূলক ব্যাচ তৈরি করে যাচাই-বাছাই (ভ্যালিডেশন) চলছে। আগামী ২৫ আগস্ট ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কারখানাটি পরিদর্শন করবেন এবং অনুমোদন পাওয়ার পরই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।

উৎপাদন সক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে

গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগসের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বর্তমানে কারখানাটি প্রতিদিন প্রায় ৩৪ হাজার বোতল আইভি ফ্লুইড উৎপাদন করছে। শিগগিরই আরও দুটি নতুন মেশিন যুক্ত হলে উৎপাদন সক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে, ফলে দৈনিক এক লাখের বেশি বোতল স্যালাইন তৈরি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি একটি সিঙ্গেল ইউনিট দিয়ে শুরু হলেও ভবিষ্যতে এর সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহের জন্য এসেনসিয়াল ড্রাগস বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আইভি ফ্লুইড কিনে থাকে, যা ব্যয়বহুল। তবে নতুন কারখানায় নিজস্ব উৎপাদন শুরু হলে সরকার আরও কম খরচে আইভি ফ্লুইড সরবরাহ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এসেনসিয়াল ড্রাগসের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ১০০ মিলি স্যালাইনের প্রতিটি বোতল কিনতে খরচ হয় ৪৮ টাকা, তবে কারখানায় উৎপাদন করলে তা ৩৮ টাকায় তৈরি হবে। ৫০০ মিলির স্যালাইন বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে ৬৭ টাকা ৭৪ পয়সায়, অথচ ইডিসিএল সেটি মাত্র ৫২ টাকায় উৎপাদন করতে পারবে। আর ১০০০ মিলি স্যালাইন বর্তমানে ৮৭ টাকায় কেনা হলেও নতুন কারখানায় তা ৭০ টাকায় তৈরি হবে।

ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল বাশার জানান, এখনো সরকার মূল্য সমন্বয় না করায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে আইভি ফ্লুইড উৎপাদন করছে। এর ফলে খাতটি অগ্রসর হচ্ছে না এবং নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানও বাজারে প্রবেশ করছে না। তাঁর মতে, এসেনসিয়াল ড্রাগস আইভি ফ্লুইড উৎপাদন শুরু করলে তা বিশেষ করে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমী চাহিদার একটি অংশ পূরণে সহায়ক হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেকর্ডসংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর কারণে তীব্র আইভি ফ্লুইড সংকট দেখা দিলে সরকারকে ভারত থেকে ২০ লাখ বোতল আইভি ফ্লুইড আমদানি করতে হয়েছিল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!