সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু

দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড প্রতিরোধে সরকার টিকা দেবে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)–এর আওতায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর ১১ মাস ২৯ দিন বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশুকে এ টিকা দেওয়া হবে। টিকা পেতে https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv–এ অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন হবে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর। নিবন্ধন শুরু হয়েছে ১ আগস্ট থেকে। নিবন্ধনের পর ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করতে হবে, আর জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করলে তা সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যাবে।

ইপিআই প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলেও শিশুরা টিকা নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বাবা–মায়ের মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করা হবে এবং টিকা গ্রহণের তথ্য কাগজে লিখে দেওয়া হবে। তিনি জানান, সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ কর্মদিবস স্কুলে ক্যাম্প করে শিক্ষার্থীদের টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হবে। ক্যাম্পেইন শেষে আট দিন ইপিআই সেন্টারে স্কুলে না যাওয়া শিশুদের টিকা দেওয়া হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া এক ধরনের সিস্টেমিক সংক্রমণ। এটি সাধারণত দূষিত খাবার বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে ছড়ায়। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য ও কখনো ডায়রিয়া। এসব উপসর্গ প্রায়ই অস্পষ্ট থাকে এবং অনেক সময় অন্যান্য জ্বরজনিত রোগের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যায়।

টাইফয়েডের তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে; গুরুতর হলে জটিলতা দেখা দিতে পারে এমনকি মৃত্যু ঘটতে পারে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল এবং নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে এমন এলাকায় এ রোগ বেশি ছড়ায়। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই

টাইফয়েডের টিকা নিয়ে অনেক অভিভাবকের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে, বিশেষ করে সাইড ইফেক্ট নিয়ে শঙ্কা বেশি। বেসরকারি চাকরিজীবী আহসান হাবিব তিন বছরের মেয়েকে এ বছর টিকা দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন। তিনি জানান, যেহেতু এবারই প্রথম সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হবে, তাই কিছুটা ভয় কাজ করছে। তাঁর ভাবনা, এ বছর ক্যাম্পেইন শেষ হোক, তারপর আগামী বছর মেয়েকে টিকা দেবেন। সেই কারণেই এবার রেজিস্ট্রেশন করেননি।

গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ার ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, টাইফয়েড ভ্যাকসিন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি শতভাগ নিরাপদ এবং বিশ্বের বহু দেশে সফলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও পূর্বে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা হয়েছে। কোভিডের আগে টাঙ্গাইলে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে এটি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সরকার গ্যাভিকে এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানায়। আগে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে কিনে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হতো, তবে এবার সরকার বিনামূল্যে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি শিশুকে এটি দেবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বর্তমানে টাইফয়েড জ্বর নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় ও প্রাদুর্ভাব উভয় পরিস্থিতির জন্য তিন ধরনের ভ্যাকসিন সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) সব বয়সের জন্য রুটিন টিকাদান কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, কারণ এটি উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়, কম বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী এবং দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করে। ডব্লিউএইচও আরও উল্লেখ করেছে, টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি অবশ্যই স্বাস্থ্য শিক্ষা, পানির মান ও স্যানিটেশন উন্নয়ন, পাশাপাশি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের মতো অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার সঙ্গে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করতে হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!