আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সবার জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হবে—এ ঘোষণা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগেই দিয়েছে। এছাড়া কোম্পানির রিটার্নও অনলাইনে দিতে হবে-এ জন্য এনবিআর প্রস্তুতি পর্ব শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। রোববার (১৬ মার্চ) এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে অনলাইন রিটার্ন দাখিলে ‘ই-রিটার্ন সিস্টেম এর সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানের উপায় নির্ধারণ’-বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় সরকারি চাকরিজীবী, পেশাজীবী, সব তফসিল ব্যাংক, মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধি, কর আইনজীবী, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদসহ সব অংশীজন অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় এনবিআর সদস্য ও কর কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের অনলাইনে রিটার্ন না দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আমাদের পুরোপুরি অনলাইনে রিটার্ন দিতেই হবে। অনলাইন রিটার্ন জমায় সময় ও অর্থ বাঁচে। আর টেনশন একদমই না। কারণ ক্যালকুলেশন, কোনটা ট্যাক্স অ্যাবল, কোনটার কত করহার কিছুই জানার দরকার নেই। আপনি তথ্যগুলো দেবেন, সিস্টেম ক্যালকুলেশন করে দেবে। অনলাইন রিটার্নে ভালো সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত বছরের তুলনায় ৫ গুন বেড়েছে। ১৫ লাখের কাছাকাছি রিটার্ন আমরা পেয়ে গেছি। আগামী বছর এটাকে শতভাগ কম্পালসারি করতে চাই, উইথ ফিউ একসেপশন। যাদের একান্ত কোনো কারণ আছে তারা দিতে পারবে না।
অনলাইন রিটার্নের সুবিধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি কেবল তথ্য দেবেন। ক্যালকুলেশনের সিস্টেম আছে। যদি কোনো ভুল ত্রুটি হয় তার দায়িত্ব ডিপার্টমেন্টের।।আপনার কোনো দায় নেই। কিন্তু আপনি যখন ম্যানুয়ালি করেন এতে যখন ভুল ত্রুটি হয় তখন পুরো দায় আপনার উপর চলে আসে।
তিনি বলেন, অনেকেই অডিটের নামে ডাকাডাকি করে। অডিটের সিলেকশন আপনাদের বিবেচনায় সঠিক হয় না। একজন করদাতা প্রতিবছর ডাক পায়। আরেকজন করদাতাকে কখনোই ডাকা হয় না। এইরকম হওয়ার কথা না। যদি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দেন তাহলে প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের কাছে থাকবে। আমাদের পক্ষে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে অটোমেটেড পদ্ধতিতে ফাইল সিলেকশন করা যাবে। তখন আপনাকে পছন্দ করে না বলে বারবার ডাকবে, এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। আগামীতে আমাদের সব কাজ ডিজিটাইজ হবে। সেই আঙ্গিকে আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যতই সময় লাগুক এনবিআরের প্রতিটি কাজকে ডিজিটাইজ করা হবে বলেও জানান চেয়ারম্যান।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বছর অনলাইন রিটার্ন দাখিলে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭৬ জন করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। একই সময়ে ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৩০৫ জন করদাতা অনলাইন রিটার্নের জন্য নিবন্ধন নিয়েছেন। আগামী অর্থবছর থেকে শতভাগ আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল বাধ্যতামূলক করার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল ঝামেলামুক্ত ও সময়সাশ্রয়ী। অনলাইন রিটার্ন ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে রিটার্ন নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভীতি কাজ করত, তা অনেকাংশ দূর হয়েছে। আয়কর রিটার্ন শতভাগ অনলাইন হলে রিটার্ন দাখিলের হার অনেক বেড়ে যাবে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।