** এক আইফোনে ১০ হাজার টাকা করে ১৯ লাখ ৫৫ হাজার আইফোনে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় এক হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা
** দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে চলছে ১০ লাখ অবৈধ আইফোন
** রবিতে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ও বাংলালিংকে ৩ লাখ ১০ হাজার ও টেলিটকে ২০ হাজার অবৈধ আইফোন চলছে
দেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্কে মোট আইফোন সচল রয়েছে ১৯ লাখ ৭৬ হাজার। যার মধ্যে ১৯ লাখ ৫৫ হাজারই অবৈধ। অর্থাৎ এসব আইফোন বৈধভাবে নয়, রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে আমদানি হয়েছে। অবৈধ এসব ফোন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ‘নক অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডেটাবেইজ (এনএআইডি)’ সিস্টেমে নিবন্ধিত নয়। নিবন্ধিত না হওয়ায় এসব ফোন দিয়ে অবৈধ বা জালিয়াতি বা রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজ করা হলে তা সনাক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে দেশীয় মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ বলেন, দামি ক্যাটাগরির এসব ফোন অবৈধভাবে আসার কারণে সরকার বিপুল রাজস্ব হতে বঞ্চিত হয়েছে। বিটিআরসি এসব ফোনকে সহজেই সনাক্ত করতে পারে। এরপর এনবিআর এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীদের কাছে রাজস্ব চেয়ে নোটিশ করে দিতে পারে।
এমআইওবি’র সহ-সভাপতি ও ইস্মার্টু টেকনোলজির সিইও রেজওয়ানুল হক বলেন, শুধু এক আইফোন দিয়েই সরকার ১০ হাজার টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। সে হিসেবে ১৯ লাখ ৫৫ হাজার আইফোন থেকে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় এক হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। যা দেশের মোট মোবাইল শিল্পখাতের এক বছরের টার্নওভারের সমান। এছাড়া এসব অবৈধ ফোন দিয়ে যেকোন ধরনের অপকর্ম, জালিয়াতি ও রাষ্ট্র বিরোধী কাজ করা সম্ভব। সরকারকে এখনই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
অপরদিকে, দেশে বৈধ পথে আইফোন আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে সেলেক্সট্রা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি আইফোন আমদানি করে তা বিক্রি করতে না পেরে এখন আমদানিই বন্ধ করে দিয়েছে। সেলেক্সট্রার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ভাইস-চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১০০ আইফোন আমদানি করে দুটিই বিক্রি করতে পারি না। ৬০ শতাংশ শুল্ককর দিয়ে বৈধ পথে আমদানি করা একটি আইফোনের সঙ্গে অবৈধ পথে আনা আইফোনের দামের পার্থক্য থাকে ৬০ হতে ৭০ হাজার টাকা।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেমন বৈধ পথে আমদানি করা আইফোন ১৫প্রো ম্যাক্স ২৫৬ জিবির দাম ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো। অথচ অবৈধ পথে আসা এই ফোনটি বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৪৮ হাজার হতে ৫০ হাজার টাকায়। যেহেতু অবৈধ পথে আসা ফোন এখানে ব্যবহারে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে কে বৈধ পথে আসা এতো টাকা বেশি দিতে কে কিনবে? রিয়াজুল ইসলাম মনে করেন, এসব অবৈধ হ্যান্ডসেট রোধে কাস্টমস এবং আইশৃনঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও সক্রিয় হলে সরকার বিপুল রাজস্ব হতে বঞ্চিত হবে না।
দেশের একাধিক মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানিয়েছেন, একটি চক্র বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের কাছে একটি বা দুইটি করে আইফোন দিয়ে দেন। বিনিময়ে ওই যাত্রীকে নামমাত্র কিছু টাকা দেওয়া হয়। ব্যবহারের কথা বলে যাত্রীরা আইফোন নিয়ে আসে। কাস্টমসকে ব্যবহারের কথা বলে কৌশলে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে চক্রের হাতে দেয়। এভাবে দেশে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আইফোন প্রবেশ করে। আর এই ফোন কম দামে বিক্রি করা হয়। বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় এসব ফোন বিটিআরসিতে নিবন্ধিত নয়। আবার লাগেজ পার্টি বিপুল পরিমাণ আইফোন দেশে নিয়ে আসে। আবার কিছু মানুষ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে গিয়ে আইফোন নিয়ে এসে দেশের কয়েকটি মার্কেটে বিক্রি করে দেয়। ফলে হাত বাড়ালে যেকোন মার্কেটে লাগেজ পার্টি বা চক্রের মাধ্যমে আনা আইফোন সহজে পাওয়া যায়। সরকার কঠোর হলে এসব ফোন থেকে সহজে রাজস্ব আদায় করতে পারে।
অন্যদিকে, লাখ টাকা দামের অনিবন্ধিত মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বলেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে মোবাইল ফোনের দেশীয় শিল্পের বাজারের বিকাশের জন্য অবৈধ ফোনের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘন ঘন অভিযান পরিচালনা করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
কোন মোবাইল ফোন অপারেটরে কত আইফোন সক্রিয়
গ্রাহক সংখ্যায় দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে চলছে ১০ লাখ আইফোন। রবিতে এই সংখ্যা ৬ লাখ ৪৬ হাজার। বাংলালিংকে ৩ লাখ ১০ হাজার আর টেলিটকে ২০ হাজার আইফোন সক্রিয় রয়েছে। সবমিলে এই ১৯ লাখ ৭৬ হাজার আইফোনের মধ্যে মাত্র ২০ হাজার বৈধ হিসেবে নিবন্ধিত।