সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি গত সোমবার নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার মধ্যে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন হস্তক্ষেপ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নানাভাবে মিথ্যাচার করছে। আশা করছি, ভারত আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে আর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবে না।
তিনি বলেন, বিগত হাসিনা সরকারের আমলে তিনটি ভুয়া নির্বাচনের বিষয়ে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে এড়িয়ে গেছে। অথচ একটি ভবন ভাঙার বিষয়ে তারা বিবৃতি দিচ্ছে। এতে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এখানে ভারতের আগ্রহ রয়েছে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, পিরোজপুর জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এক হাজার ৬০০ কোটি লোপাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে।আর এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে পিরোজপুর জেলায় গত চার বছরে ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, তিন ধাপে এই অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, এই দুর্নীতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতিতে পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি শ ম রেজাউল করিম, পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক এমপি মহিউদ্দীন মহারাজ এবং তাঁর ভাই ভাণ্ডারিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম, নাজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নুরে আলম শাহীনও জড়িত।
বিভিন্ন স্তরের যোগসাজশে পিরোজপুরে অর্থ লোপাট হয়েছে এক হাজার ৬৪৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
উপদেষ্টা জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং জড়িত ব্যক্তিদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পিআরএল ভোগরতদের পাওনা স্থগিত করা হয়েছে। রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। পিরোজপুরের হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিজএলকে অনুরোধ করা হয়েছে। অর্থ তছরুপের বিষয়টি উদঘাটনে তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।
উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দুর্নীতির দায়ে বরখাস্তকৃতরা হলেন এ কে এম মো. মোজাম্মেল হক খান, মো. মোরশেদ সরকার, মো. জাকির হোসেন মিয়া, মো. বদরুল আলম, মো. রিপন হাওলাদার, এবং আদনান আখতারুল আলম। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং পিআরএল ভোগরতদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে। উপদেষ্টা বলেন, পিরোজপুরের দুর্নীতির ঘটনা বিশেষ এবং যারা বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাদের ফেরত আনার জন্য বন্দিবিনিময় চুক্তি প্রয়োগ হবে। অভিযুক্তদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে