প্রায় ১০ কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন মামলার আসামি সেই কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ এনামুলকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব মো. হুমায়ুন কবীর সই করা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে হলে তিনি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবসরে যাওয়ার কথা। তবে দুর্নীতির মামলার আসামি হওয়ায় তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ১৩তম ব্যাচের এই কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় এর আগে কমিশনার থেকে এনবিআরের সদস্য হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ এনামুল হক কমিশনার অব কাস্টমস, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত এর চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা-৪৫ এবং ধারা-৫১ অনুযায়ী জনস্বার্থে তাকে চাকরি হতে অবসর প্রদান করা হলো। তিনি ভবিষ্য তহবিলে প্রদত্ত তার চাঁদা এবং এর সুদ ব্যতীত অন্য কোনো অবসর সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। উল্লেখ্য, ১৫ অক্টোবর সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার হিসেবে কর্মরত থাকাবস্থায় তাকে বদলি করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। সংযুক্ত করার সাতদিনের মাথায় তাকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। অর্থাৎ অনেকটা জোর করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
দুদক সূত্রমতে, ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুলাই এনামুলের ঢাকা ও গাজীপুরে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেছে আদালত। এর মধ্যে ঢাকার বসুন্ধরায় একটি নয়তলা বাড়ি ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিনটি ফ্ল্যাট এবং একাধিক বাণিজ্যিক স্পেস জব্দ করা হয়। এর বাইরে গাজীপুর, গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় এনামুলের ৪৭ শতাংশ জমি জব্দ করা হয়। জব্দ করা সম্পদের বাইরেও তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে একাধিক বাড়ি, মাছ ও গরুর খামারের খোঁজ মেলার কথা জানায় দুদক।
ক্রোক করা সম্পত্তির বর্ণনায় বলা হয়েছে, গুলশানের জোয়ার সাহারায় ৬১ হাজার টাকার (দলিল মূল্য) তিন কাঠা জমি, খিলক্ষেতে ৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকার ৩৩ শতাংশ জমি, কাকরাইলের আইরিশ নূরজাহান টাওয়ারে কমন স্পেসসহ ১১৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার মূল্য ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা, একই ভবনে কারপার্কিং স্পেসসহ ১৮৩৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট যার মূল্য ৫১ লাখ ২৯০০ হাজার টাকা। এছাড়া কাকরাইলে ১৯০০ বর্গফুট ও ৩৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটসহ কারপার্কিং, যার মূল্য ২ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গাজীপুরে ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকার পাঁচ কাঠা জমি, মোহাম্মদপুরে তিনটি বাণিজ্যিক ভবনে চার হাজার বর্গফুটের তিনটি স্পেস, যার প্রতিটির মূল্য ৭১ লাখ ৩৫ হাজার করে। এছাড়া মোহাম্মদপুরে ১০ হাজার ৯৬৫ বর্গফুটের স্পেস রয়েছে, যার মূল্য দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গুলশানে আছে ৭২ লাখ টাকার ২৪২৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং বাড্ডায় চার কাঠা নাল জমি যার মূল্য ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।