শেখ হাসিনা সহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দাখিল করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালীন এবং পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এই প্লট বরাদ্দ তাদের জন্য যোগ্য না হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে বরাদ্দ গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সোমবার ( ১০ মার্চ ) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চার্জশিট অনুমোদন হওয়ার পর আদালতে দাখিল করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল। চার্জশিটে নতুন করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিনকে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালীন এবং পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ছয়টি প্লট অসৎ উদ্দেশ্যে বরাদ্দ নিয়েছেন, যদিও তারা এসব প্লট পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চার্জশিটের আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক।

অন্যদিকে জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পুরাতন ১৪ আসামিরা হলেন- ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো: নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো: হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।

অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং সরকারের বিশেষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নিজের, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।

শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা গত ২৭ ডিসেম্বর জানিয়েছিল দুদক। দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।

দুদক গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। একই দলকে নতুন ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবগুলোই বর্তমানে অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!