শেখ হাসিনাসহ ১২৯ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ১২৯ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গত ছয় মাসে এসব মামলা দায়ের করা হয় বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

জানুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও প্লট জালিয়াতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ, অর্থপাচার, আত্মসাৎ ও জালিয়াতির ঘটনায় শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১২০টি মামলা করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধান ও মামলা ছাড়াও দুদক বিতর্কিত ব্যবসায় গ্রুপ এস আলম, বেক্সিমকোসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করেছে। গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুরসহ পাঁচজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে।দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, শেখ হাসিনাসহ আড়াই শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা–অনুসন্ধান
তিনটি বিমানবন্দরের চার প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়।ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক হয়েছিলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এই অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর সূচনা ফাউন্ডেশন ও আওয়ামী লীগের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। পাশাপাশি গাজীপুরে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বাগানবাড়ি নিয়েও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১৫ বছরে বড় প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। এসব দুর্নীতিতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম এসেছে।

মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
দুদক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুদক প্রথম মামলা করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ৯ অক্টোবর তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।অনিয়ম–দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সর্বশেষ বুধবার সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ৯ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৩ জানুয়ারি সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী মোছা. হোসনে আরা বেগম এবং তাঁদের ছেলে মো. রাকিবুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ছাড়াও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ একাধিক আমলা ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধ মামলা করেছে দুদক।

১৬ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত বছর প্রায় ১৬ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে ৮০ ভাগ অভিযোগ এসেছে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর। এসব থেকে ১ হাজার ৮৯৪টি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। অনুসন্ধান শেষে মামলা হয়েছে ৩৩৭টি। মামলা তদন্ত শেষে আদালতে ১৪৬টি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ৩৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে ৪৪৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১৮২টি, আত্মসাতের অভিযোগে ১২৭টি, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ৩৬টি ও জালিয়াতির ঘটনায় ২১টি মামলা হয়েছে। দুদক জানিয়েছে, তদন্ত শেষে ৩৫৪টি মামলায় অভিযোগপত্র ও ৪৮টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জনগণের প্রত্যাশা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে দুদকের প্রতি জনগণের হতাশা আরও বাড়বে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!