বেনাপোলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছে ভারতীয় পোশাক

ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের মাধ্যমে শাড়ি, টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা দেশে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটি বলছে, স্থানীয় বাজারে যে পরিমাণ ভারতীয় পোশাক বিক্রি হয়, তার তুলনায় বৈধ আমদানি অনেক কম। মূলত মিথ্যা ঘোষণা ও চোরাচালানের মাধ্যমে এসব পোশাকের বড় অংশ বাজারে আসছে।

বিদেশি কাপড় ও পোশাক আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালান রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তাঁত ও জামদানি শাড়ি, থ্রি–পিসসহ অন্যান্য পোশাকের বাজার সংরক্ষণ করা যায়। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সোমবার ( ১১ মার্চ ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে পাঠিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে কাপড়ের চাহিদা প্রায় ৮০০ কোটি মিটার। কাপড়ের এই চাহিদার একটি অংশ দেশীয় তাঁত, হস্তশিল্প ও পাওয়ারলুমের মাধ্যমে পূরণ হয়। তবে বিদেশ থেকে বৈধ ও অবৈধভাবে (শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালান) প্রবেশ করা কাপড় ও পোশাকের একটি বড় অংশ দেশীয় চাহিদা মেটায়।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাধারণত ভারত, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, হংকং, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কাপড় আমদানি করা হয়। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে যথাক্রমে ১৩ হাজার কোটি ও ১৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার শাড়ি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ২৮২ কোটি ও ২৫৮ কোটি টাকার শাড়ি। একই সময়ে উল্লেখিত দেশগুলো থেকে ২ হাজার ১৭৯ কোটি ও ১ হাজার ৫৩১ কোটি টাকার টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ইত্যাদি পোশাক আমদানি হয়, যার মধ্যে ভারত থেকে এসেছে যথাক্রমে ১১৬ কোটি ও ৭৬ কোটি টাকার পোশাক।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে গত ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার শাড়ি আমদানি হয়েছে। তার মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ১০৬ কোটি টাকার শাড়ি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৫৮ কোটি টাকার টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ইত্যাদি পোশাক আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ১৭ কোটি টাকার পণ্য।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে যে পরিমাণ ভারতীয় টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, জামদানি ও তাঁত শাড়ি বিক্রি হয়, সে তুলনায় বৈধ আমদানি অনেক কম। এসব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে যে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ঘোষণা করা হয়, তা বাজারজাত করা মূল্যের তুলনায় অনেক কম।

স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছে যে, টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, শাড়িসহ সব ধরনের কাপড় ও পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে বা ব্যাগেজ রুলসে আনা এসব পণ্যের এইচএস কোডে যথাযথ শুল্কায়ন নিশ্চিত করতে এনবিআরকে আমদানি–সংশ্লিষ্ট সব শুল্কস্টেশনে বিশেষ নির্দেশনা দিতে হবে। এছাড়া, মিথ্যা ঘোষণা রোধে শুল্ক ভবন বা স্টেশনের মাধ্যমে আমদানিকৃত সব ধরনের কাপড় ও পোশাকের শুল্কায়নকালে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তার পাশাপাশি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরসহ তৃতীয় কোনো এজেন্সির উপস্থিতিতে শতভাগ পণ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

** চাকার স্লাবে শুল্ক, বেনাপোলে রাজস্ব কমছে
** বেনাপোল বন্দর-কাস্টমসে সবই অনিয়ম
** বন্দরের দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত, শাস্তি পায়নি কাস্টমস কর্মকর্তারা!
** রাজস্ব কর্মকর্তার ২৩ লাখ টাকা জব্দ, টাকার উৎস নেই
** কসমেটিকস আমদানিতে জালিয়াতি, চলছে রাজস্ব ফাঁকি
** ঘুস নিয়ে শুল্ক ছাড়াই পণ্য ছাড়, দুদকের অভিযান

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!