শুল্ক জটিলতায় হিলি স্থলবন্দর আটকে আছে আমদানি করা চাল। গত চার দিনে ৮৮টি ট্রাকে আসা অন্তত ৩ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন চাল বন্দরে আটকে থাকায় আমদানিকারকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এ বিষয়ে সোমবার (১৮ আগস্ট) রাতে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল জানান, সরকার চাল আমদানির শুল্ক প্রত্যাহার করে আগের মতো ২ শতাংশ আয়কর ঘোষণা দিলেও কাস্টমসের সার্ভারে এখনও চালের আমদানি শুল্ক ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ দেখাচ্ছে।
এই শুল্ক পরিশোধ করে চাল ছাড় করলে কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা ডিউটি দিতে হবে, ফলে আমদানি মূল্য দাঁড়াবে ৯৫ টাকার বেশি। এতে চাল খালাস করলে আমদানিকারকদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এ অবস্থায় অবিলম্বে সমস্যার সমাধান করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাজমুল। তিনি জানান, প্রতিদিন এভাবে আমদানিকারকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অন্যান্য স্থলবন্দরেও একই ধরনের জটিলতা চলছে বলে জানা গেছে।
দেশের ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার সারাদেশের ২৪২ জন আমদানিকারককে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। এর পর গত মঙ্গলবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হলেও চার দিন পার হলেও ব্যবসায়ীরা এখনো খালাস করেননি। এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে চাল আমদানি শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যায়। চার মাস বিরতির পর গত ১২ আগস্ট থেকে পুনরায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের সিদ্ধান্ত অনুসারে চাল আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ছাড়া অন্য কোনো শুল্ক বা কর প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়।
অপরদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণার পর বিভিন্ন চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশের ৫ লাখ টন শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ঘোষণার পর ভারতে চালের বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভোক্তা পর্যায়ে স্বর্ণা চালের দাম প্রতি কেজি ৩৪ রুপি থেকে বেড়ে ৩৯ রুপি, মিনিকেট ৪৯ রুপি থেকে বেড়ে ৫৫ রুপি, রত্না চাল ৩৬-৩৭ রুপি থেকে বেড়ে ৪১-৪২ রুপি এবং সোনা মসুরি ৫২ রুপি থেকে বেড়ে ৫৬ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতের চাল রপ্তানি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান রাইসভিলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুরজ আগরওয়াল জানিয়েছেন, গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর রাত থেকেই ভারত থেকে চালের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। তিনি আরও বলেন, পরিবহন খরচ ও সুবিধার কারণে উত্তরপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের চালকলগুলোও পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চাল রপ্তানি করছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে চালের দাম ১৬ শতাংশ বেড়ে যায়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়। দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার এবার শুল্কমুক্ত চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতের চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হালদার ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেশব কুমার হালদার বলেন, বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ ভালো থাকা এবং ভারতে সরকারি ও বেসরকারি মজুত পর্যাপ্ত থাকায় বৈশ্বিক দাম কিছুটা কমে গেছে। বাংলাদেশের আমদানি আদেশ ভারতীয় বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করে বৈশ্বিক চালের দামের পতনকে আংশিকভাবে সামলাতে সাহায্য করবে।
**চাল রপ্তানির খবরে ভারতে দাম বড়েছে ১৪%
**চার লাখ টন চাল আমদানি করবে সরকার
**চালের দাম বেড়েই চলেছে
**‘জিটুজি’ পদ্ধতিতে ভারত থেকে চাল আমদানির চেষ্টা
**চালের দাম কমে যতটা, বাড়ে তার দ্বিগুণ
**ভিয়েতনাম থেকে এলো ২০ হাজার টন চাল
**আমদানি বাড়লেও চালের দামে ঊর্ধ্বমুখী
**ভিয়েতনাম থেকে এলো ১২.৫ হাজার টন চাল
**চালের এত আমদানি এর পরও কমছে না দাম
**ভারত থেকে এল সাড়ে ১১ হাজার টন চাল
**ভিয়েতনাম থেকে এলো ২৯ হাজার টন চাল
**পাকিস্তান থেকে এলো ২৬ হাজার টন চাল
**কেজিতে ১৭ টাকা বেড়েছে চালের দাম
**রমজানে স্বস্তি বাজারে, অস্বস্তি শুধু চালের দামে
**সিন্ডিকেটের কবলে চাল আমদানি
**চাল আমদানি হচ্ছে টনকে টন,তবুও কমছে না দাম