সাবেক এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ২৪টি গাড়ি সিন্ডিকেটের কারসাজির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি টের পেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পরবর্তী নিলাম স্থগিত করেছে। এর আগে গাড়িগুলোর ই-নিলামে সিন্ডিকেটের সদস্যরা নামমাত্র দর দিয়েছে, কারণ দ্বিতীয় নিলামে প্রথম নিলামের তুলনায় সামান্য বেশি দর দিলেই গাড়ির মালিক হয়ে যেত তারা।
চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ই-নিলামের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সাবেক এমপিদের ২৪টি বিলাসবহুল গাড়িসহ মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলে। এসব গাড়ি ৪৪টি লটে ভাগ করে নিলাম আয়োজন করা হয়, যেখানে জমা পড়ে ১৩৩টি দরপত্র। তবে ১১টি লটে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। এর আগে দ্বাদশ সংসদের সদস্যরা প্রতিটি প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস নিতে না পারায় তা নিলামে তোলা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর হঠাৎ পটপরিবর্তনে এসব এমপির ‘কপাল পুড়ে’। গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি হলে সরকার পেত প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, প্রথম নিলামে সংসদ সদস্যদের গাড়িগুলোর যেভাবে দর পড়েছে, তা ভিত্তি ধরে দ্বিতীয়বার নিলামে তোলা হলে সেগুলো বিক্রির সুযোগ থাকবে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রথম নিলামের চেয়ে বেশি দর দিতে হবে এবং সর্বোচ্চ দরদাতা হতে হবে। ফলে পরবর্তী নিলামে গাড়িগুলো বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাস্টমস আইনে নিলামের ক্ষেত্রে লটের নির্ধারিত মূল্যের অন্তত ৬০ শতাংশ দর পাওয়া বাধ্যতামূলক। তবে প্রথম নিলামে এ শর্ত পূরণ না হলে, দ্বিতীয় নিলামে একই লটে প্রথমবারের চেয়ে কিছুটা বেশি দর দিলেই পণ্য খালাসের সুযোগ রয়েছে। এই বিধানকে সুযোগ হিসেবে নেয় একটি সিন্ডিকেট। তারা এবারও শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সাবেক এমপিদের গাড়ির ক্ষেত্রে একই কৌশল নিতে চেয়েছিল। প্রথম নিলামে নামমাত্র দর দিয়ে, পরবর্তী নিলামে সামান্য বেশি দর দিয়ে গাড়িগুলো হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি বুঝতে পেরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবার সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নেয়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সাবেক এমপিদের গাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শনাক্ত করে, পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দেন কাস্টম হাউসের নিলাম বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। ১১ মার্চ পাঠানো ওই চিঠির জবাবে ২৪ মার্চ এনবিআর জানিয়ে দেয়, গাড়ির নিলামের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এর ফলে এমপিদের গাড়িসহ অন্যান্য সব গাড়ির নিলামও বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সাবেক এমপিদের গাড়ির নিলামে সিন্ডিকেটের কারসাজি স্পষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয়বার আর নিলাম দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) মতামত চাওয়া হয়েছিল, এবং সেখান থেকেও মতামত এসেছে। ফলে কারসাজির মাধ্যমে কোটি টাকার গাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ আর নেই। তিনি বলেন, শিগগিরই এসব গাড়ির আর নিলাম হবে না। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের নতুন নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকতে হবে। প্রয়োজনে গাড়িগুলো সরকারি কোনো দপ্তরে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে, তবে তা সম্পূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্তসাপেক্ষ।