চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্ট্রবেরি চাষে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এটি প্রতি বছর বেড়ে চলেছে। এখানকার উৎপাদিত স্ট্রবেরি জেলা ছাড়িয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে এই জেলা স্ট্রবেরি চাষে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে। জেলার একটি উপজেলায় স্ট্রবেরি বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৭০ কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ বলছে, আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল জাতের এ স্ট্রবেরি সবচেয়ে বেশি চাষ হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুর, ভাঙ্গাব্রিজ, পারকালুপুর, পারদিলালপুর এলাকায়। তবে এসব এলাকায় স্থানীয় বাজার না থাকায় চাষিরাই বিক্রির জন্য পাঠিয়ে থাকেন ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে।
শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের পারদিলাম গ্রামের স্ট্রবেরি চাষি আনারুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর থেকেই আম গাছ কেটে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছি। রমজান মাসে বেড়েছে এর চাহিদা। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। এতে লাভবান হচ্ছি।’এলাকার যুবক আহসান সজিব জানান, তিনি অনার্স শেষ করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় এবার আবাদ করেছেন স্ট্রবেরি। ২ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে দিনে ৫০ কেজি পর্যন্ত বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, ‘অনার্স শেষ করে স্ট্রবেরি চাষ করছি। প্রথমদিকে মানুষ আমাকে নিয়ে উপহাস করতো। আমিও মনে মনে কষ্ট পেতাম। এক পর্যায়ে অল্প ফল হতে হতে এখন আমি ৫০ কেজির বেশি স্ট্রবেরি বিক্রি করছি। যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। দিনে আমার আয় ৩০ হাজার টাকা। এতে খরচ বাদ দিয়ে দিনে ১৫ হাজার টাকার বেশি লাভ থাকে।’
শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের কালোপুর গ্রামের বাসিন্দা শাফিক আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের চিত্রই পরিবর্তন করে দিয়েছে স্ট্রবেরি। গ্রামের সিংহভাগ মানুষ এখন স্ট্রবেরি চাষ করে। অনেক মানুষ স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’আব্দুল করিম নামে এক স্ট্রবেরি চাষি বলেন, ‘আম চাষে অনেক দিন ধরে লোকসান গুনছি। তাই বাধ্য হয়েই স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছিলাম। গত বছর তেমন লাভবান হতে পারিনি। এ বছর ২ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছি।’
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিয়া বলেন, ‘শুধু শিবগঞ্জ উপজেলায় বছরে প্রায় ৭০ কোটি টাকার স্ট্রবেরি উৎপাদন হয়। তাই বিদেশে রপ্তানির চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদেশে রপ্তানি হলে চাঙা হবে জেলার অর্থনীতি। লাভবান হবেন কৃষকেরা।’তিনি বলেন, ‘অল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফা হওয়ায় স্ট্রবেরি চাষে কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি। স্ট্রবেরি চাষে তারা যেমন লাভবান হচ্ছেন; তেমনই এর ঝুঁকিও আছে। বাজার ধরতে না পারলে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীনও হতে পারেন।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘স্ট্রবেরির বাম্পার ফলন হলেও নেই স্থানীয় বাজার ব্যবস্থা। এতে বিপণনে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। আমের মতো স্থানীয় বাজার ব্যবস্থা থাকলে আমরা আরও লাভবান হতাম।’