শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর চলমান থাকবে

আগামীকাল রোববারও ‘শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। শনিবার (২৮ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী থাকলেও, তাদের শর্ত—আলোচনার আগে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই শাটডাউন কর্মসূচির আওতায় থাকবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার। তিনি বলেন, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে গত ২৫ মে প্রকাশিত সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে রাজস্ব খাতে কোনো প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়। তার অভিযোগ, চেয়ারম্যান একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রতিনিধির মতো আচরণ করছেন এবং কার্যত ফ্যাসিবাদী প্রবণতার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন।

আজ রোববারও ‘শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অফিস কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শাটডাউনের কারণে ভবনের ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না এবং ভেতর থেকেও কেউ বাইরে আসতে পারছেন না। ফলে এনবিআরের সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টমস হাউসসহ দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে আমদানি-রপ্তানির সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার অভিযোগ করেন, পলাতক আওয়ামী ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যে ৪৪ জন আমলার তালিকা তৈরি হয়েছে—যার মধ্যে ছয়জন ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছেন—সেই তালিকায় এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানের অবস্থান তৃতীয়। তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে অস্বাভাবিক নয়।

তিনি আরও বলেন, এই অবৈধ আদেশের মাধ্যমে এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত জিঘাংসা চরিতার্থ করছেন। তাঁর এহেন কর্মকাণ্ড দুরভিসন্ধিমূলক। তিনি নিপীড়নমূলক বদলিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের পরিবেশ বিনষ্ট করছেন। এই পরিস্থিতিতে কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২১ ও ২২ জুন একাধিক আদেশের মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রতিহিংসামূলক ও নিপীড়নমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে। কর্মসূচিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া পাঁচজন আয়কর কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে, অপেক্ষাকৃত কম রাজস্ব সম্ভাবনাসম্পন্ন দপ্তরে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এসব আদেশে প্রাপ্য যোগদানকাল না দিয়ে, পরবর্তী কর্মদিবসেই নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে, যা সরকারি চাকরির বিধিবিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়।

এনবিআরের আন্দোলন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সম্মেলনের বিষয়ে ঐক্য পরিষদ থেকে বলা হয়, ব্যবসায়ী সমাজ এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোন মতে-ই কাম্য নয় এবং তাতে কোন সফলতা আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন। আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সাথে বলছি যে, কি কারণে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর একজন আমলার অপসারণ ব্যবসায়ী সমাজ কেন কাম্য নয় বলছেন-সেটি তাঁদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খোলাসা করে বলেননি। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ী সমাজসহ পুরো দেশবাসীর কাছে ইতোমধ্যেই পূর্বের প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং আজকের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে খোলাসা করেছি যে, রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ, প্রকৃত, টেকসই ও বাস্তব সম্মত সংস্কারের স্বার্থে কেন ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার, ব্যবসায়ী সমাজ, ও দেশবাসী বিতর্কিত এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণে আমাদের দাবির সাথে একমত হবেন। দক্ষ, আধুনিক ও হয়রানিমুক্ত এনবিআর গড়ার লক্ষ্যে সার্বিক সংস্কার, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ব্যতীত ভিন্ন কোন পথ খোলা নেই।

** কমপ্লিট শাটডাউন চলছে, অবরুদ্ধ এনবিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!