শহীদুল হকের শত কোটি টাকার সম্পদের নথি জব্দ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের শত কোটি টাকার সম্পদের দলিলসহ বিভিন্ন নথি উদ্ধার করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার এক আত্মীয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে এসব নথি জব্দ করা হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, উদ্ধার করা দলিলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শহীদুল হক এসব গুরুত্বপূর্ণ নথি আত্মীয়দের মাধ্যমে স্থানান্তর করে গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন।

গত বছর ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর শহীদুল হককে ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় বিভিন্ন থানার হত্যা মামলায়। গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে কয়েক দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয় পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শককে।গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম এ অভিযান চালায়। জানা যায়, দুদক, এনবিআর ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিতে গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি আত্মীয়ের বাসায় লুকিয়ে রাখেন শহীদুল।

তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের একটি বাসায় এ অভিযান চালানো হয়। সেখানে শহীদুল হকের ছোট বোনের ননদ সম্পর্কীয় নীগার সুলতানার বাসা থেকে এসব দলিল জব্দ করা হয়েছে।

বস্তায় যা পাওয়া গেছে
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজির আহমেদ বলেন, তল্লাশিকালে দুটি বস্তায় ৩৮ ধরনের ৪৮টি আলামত পাওয়া গেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মূল্যবান সম্পত্তির দলিল, গোপনীয় চুক্তিপত্র, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, বন্ড, এফডিআর, সংঘ স্মারক, অফার লেটার, ব্যাংক হিসাব বিবরণীসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ নথি।তিনি আরও বলেন, সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান। অনুসন্ধান কার্যক্রমের একপর্যায়ে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট জানতে পারে, শহীদুল হক তার অবৈধ সম্পদের তথ্য সম্বলিত নথিপত্র আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়েছেন। সে আত্মীয় আবার আরেক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের বাবা-মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রয়েছে।ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তিনটি শাখায় এ ফাউন্ডেশনের নামে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, ফারমার্স ব্যাংকের ৮টি হিসাবে ৪ কোটি ৭০ লাখ এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চারটি হিসাবে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে।এছাড়া, বিভিন্ন ব্যাংকে মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে প্রায় অর্ধশতাধিক সঞ্চয়ী হিসাব ও এফডিআরের নথিপত্র উদ্ধার করেছে দুদক। শহীদুল হক ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত রয়েছে বলেও জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, ওই দুই বস্তায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের দলিল ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কাগজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সাতটি পৃথক দলিল, সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ঢাকার পাঁচটি, উত্তরার দুটি, কেরানীগঞ্জের দুটি, মোহাম্মদপুরে দুটি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ফতুল্লার ১০টি দলিল রয়েছে। এছাড়া তার একটি ব্যক্তিগত ৭৯ পাতার ডায়েরি পাওয়া গেছে যাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য নোট করে রেখেছেন শহীদুল হক। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

এ কে এম শহীদুল হক ১৯৮৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জ জেলার দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিআইজি হিসেবে তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, রাজশাহী রেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জে কর্মরত ছিলেন।গত বছর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তার, তার স্ত্রী শামসুন্নাহার রহমান এবং তাদের তিন সন্তানের নামে থাকা ৭২টি ব্যাংক হিসাবে ৫৬০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য প্রকাশ করেছিল। একই বছরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তবে তিনি বরাবরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

**আইজিপি শহিদুলের ব্যাংক হিসাবে৫৬০ কোটি টাকার লেনদেন

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!