লক্ষ্যমাত্রা কেন অর্জিত হয়নি, আইএমএফ’র প্রশ্ন

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে চলমান ঋণ চুক্তির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ কর বাড়ানোর শর্ত কেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পূরণ করতে পারেনি-সে বিষয়ে জবাবদিহি চেয়েছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এনবিআরের সঙ্গে চারটি আলাদা বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।

বৈঠকে প্রথমে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ আয়কর, মূসক ও শুল্কনীতির সদস্যদের সাথে আলোচনা হয়। পরে এই তিন বিভাগের নীতি শাখার কর্মকর্তাদের সাথে আলাদা করে কারিগরি সভা হয়েছে। আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে’র নেতৃত্বে আরও দুই সদস্য সেখানে অংশ নেন এই সভায়।

উল্লেখ্য, আইএমএফ চলমান ঋণ কর্মসূচির শর্ত ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো। আইএমএফ গত অর্থবছরে বাংলাদেশকে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা কর-রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। এ কর রাজস্বের মধ্যে এনবিআর-বহির্ভূত করও অন্তর্ভুক্ত।

আলোচনার বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমরা (এনবিআর) কেন জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ কর বাড়াতে পারলাম না-সে বিষয়ে তারা (আইএমএফ) জবাবদিহি চেয়েছে। আমরা বলেছি, মূসক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। আয়কর ও শুল্ক পারেনি। কারণ, আমদানি কমে গেছে গত অর্থবছর। ফলে আমদানিতে আমরা অগ্রিম কর কম আহরণ করতে পেরেছি। একই সমস্যা হয়েছে শুল্ক আহরণেও।’ দেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক সংকট, শিল্পের অস্থিরতা, ও জুলাই-অগাস্ট আন্দোলন ঘিরে স্থবিরতায় রাজস্বের যে ঘাটতি প্রথম দু’মাসে হয়েছে সেটি উল্লেখ করে চলতি অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা কমানোরও আহ্বান আইএমএফকে জানানো হয়েছে বলে তিনি বলেন।

এ বিষয়ে আইএমএফ এর মত কী জানতে চাইলে এই সদস্য বলেন, ‘আইএমএফ চলমান বিষয়গুলো জানে। এখনও লক্ষ্য কমানোর কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে সামনের দিনগুলোতে রাজ্স্ব আদায় বাড়াতে জোর দিয়েছেন।’ এজন্য তাদের যে সংস্কার পরামর্শ ছিল সেগুলোতে আবারও জোর দিয়েছেন। কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা, রেমিট্যান্সে কর বসানো, সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিদের একইরকম কর কাঠামো, বিভিন্ন ফান্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে কর ছাড় কমানো, করপোরেট রিটার্ন দাখিল পুরোপুরি অটোমেশনে নিয়ে আসা, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়ন এবং বাজেটে নেওয়া কর মেজারস ও উদ্যোগের সফলতা ও এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় বিশ্লেষণ অন্যতম। এছাড়াও আয়কর আইন ও কাস্টমস আইনের অভিজ্ঞতা ও রাজস্ব আদায়ে প্রভাবও জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

আইএমএফের ঋণ চুক্তির আওতায় বলা হয়েছে, এনবিআরকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে একইভাবে আরও দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাড়তি দশমিক ৭ শতাংশ কর বাড়াতে হবে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে থেকে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ করে এনবিআর। এ সময় তিন লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে অথচ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রথমে যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফ অবশ্য কমিয়ে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ৪ লাখ ৫০০ কোটি টাকা; এর তুলনায়ও ১৭ হাজার কোটি টাকা কম আদায় করে রাজস্ব আহরণের প্রধান এ সংস্থা। আইএমএফের পরের বা চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ডিসেম্বরে। এর জন্য এনবিআরের মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়নের কথাও রয়েছে।

এই সদস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তিন অনুবিভাগেই ইতোমধ্যে কৌশলপত্রের খসড়া তৈরি করেছি। আইএমএফ চায়, আলাদা না হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ করা। আমরা সে মতে কাজ করছি।’ আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় মূসক ও আইটিতে কমপ্লায়েন্স, ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসির বাস্তবায়ন, কাস্টমসের রিস্ক ম্যানেজম্যান্টি ইউনিট চালু, ভ্যাট প্রশাসনের সংস্কার, আলাদা করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ব্যয় বা অব্যাহতির প্রতিবেদন তৈরির হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক এ ঋণদাতা সংস্থাটি। এনবিআরের নেওয়া কিছু পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে বদিউল আলম বলেন, ‘আরও কিছু নীতি গ্রহণের কথা তারা বলেছেন। আমরা বলেছি, আগামী বাজেটে আরও কিছু পদক্ষেপ নেব।’

***

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!