লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত: জাহাজ-গাড়ি-পণ্য কম এসেছে

মোংলা বন্দর

দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেশি নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এক সময়ের প্রায় অচল এই বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে এবং প্রতিবছর রেকর্ডসংখ্যক জাহাজ আগমনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, কিন্তু অর্জিত হয়েছে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা—যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেশি।

এ অর্থবছরে মোংলা বন্দর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় সবখাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ৮০০টি জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এসেছে ৮৩০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০টি ও ৩.৭৫ শতাংশ বেশি। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, অথচ বাস্তবে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন— যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭.২৫ শতাংশ বেশি।

কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েও মোংলা বন্দর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ২০ হাজার টিইইউ (২০ ফুট সমপরিমাণ ইউনিট) হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বাস্তবে হ্যান্ডলিং হয়েছে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ, যা ৭.২৮ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য ছাড়িয়েছে বন্দর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, তবে অর্জিত হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা— অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং ২.৮৩ শতাংশ বেশি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানিয়েছেন, বন্দরের সাফল্যের পেছনে রয়েছে সঠিক পরিকল্পনা ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়। তিনি বলেন, বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্টেকহোল্ডার, শিপিং এজেন্ট, সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট, স্টিভেডরসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও জানান, অভ্যন্তরীণ ব্যবসা উন্নয়ন স্থায়ী কমিটি গঠনের ফলে জাহাজ আগমনও বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরে কোনো জাহাজজট নেই। কনটেইনার খালাসে টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম ১.৬৬/৪০ ঘণ্টা এবং অন্যান্য কার্গোর ক্ষেত্রে ৩.৩৭/৭৮ ঘণ্টা। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা, পাশাপাশি বন্দরে সাতটি টি-ইয়ার্ড এবং ৩৮টি সহায়ক জলযান রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইএসপিএস কোড মেনে চলা হচ্ছে, রয়েছে কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল এবং নিরাপদ সড়ক ও নৌপথে মাল পরিবহনের সুব্যবস্থা বলেও জানান তিনি।

বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বন্দর পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বন্দর পরিদর্শন করে কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কার্যক্রমে গতি এসেছে, কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

** মোংলা বন্দর: ভারতকে হটিয়ে চীনের বিনিয়োগ
** মোংলা বন্দর উন্নয়নে ৪০৬৮ কোটি টাকা ব্যয়
** মোংলা বন্দরের উন্নয়নে চীন দেবে ৩৫৯২ কোটি টাকা
** মোংলা বন্দরে ৭২ গাড়ির নিলাম, ২৭টির বিক্রয়াদেশ
** ৮০০ কোটি টাকায় মোংলা বন্দরে দুটি নতুন জেটি
** রাজস্ব ঘাটতি: মোংলা কাস্টমসে ৭৩১ কোটি টাকা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!