বিশেষ প্রতিনিধি: দেশে মোবাইল ফোন খাতের বিকাশে করছাড় দিয়েছে সরকার। বিশেষ করে মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে সিপিসি (কাস্টমস প্রসিডিউর কোড) বা রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে এনবিআর আদেশ (এসআরও) জারি করে। তবে এ রেয়াতি সুবিধা নিতে শর্ত দেয়া হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো- যন্ত্রাংশ বিযুক্ত অবস্থায় আমদানি করতে হবে। কিন্তু মোবাইল ফোন উৎপাদন বা সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এ সুবিধার অপব্যবহার করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যন্ত্রাংশ যুক্ত অবস্থায় আমদানি করা হয়। একটি যন্ত্রাংশ ঘোষণা দিয়ে ওই যন্ত্রাংশের সঙ্গে একাধিক যন্ত্রাংশ যুক্ত করে মিথ্যা ঘোষণায় যন্ত্রাংশ আমদানি করে আসছে। এতে একদিকে ফোন উৎপাদন বা সংযোজনকারী কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা অবৈধ রেয়াতি সুবিধা নেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও ঢাকা কাস্টম হাউসে বেশ কয়েকটি চালান আটক করে। কায়িক পরীক্ষায় মিথ্যা ঘোষণা ও রেয়াতি সুবিধার বিষয়টি উঠে আসে। এ অপব্যবহার ও মিথ্যা ঘোষণায় যন্ত্রাংশ আমদানির শীর্ষে রয়েছে সিম্ফনি ও অপো। কাস্টমস গোয়েন্দা বলছে, রেয়াতি সুবিধা ও মিথ্যা ঘোষণায় বেশিরভাগ কোম্পানি যন্ত্রাংশ আমদানি করে আসছে। এ জাতীয় পণ্য চালান পরীক্ষণ বা শুল্কায়নের সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে প্রচুর রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। যন্ত্রাংশ শুল্কায়নে সতর্ক হতে কাস্টম হাউসগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া এনবিআরকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সব নিয়ম মেনে আমদানি করা সত্ত্বেও ব্যাখ্যাগত অস্পষ্টতার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, অসত্য ঘোষণায় মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ আমদানি করা হচ্ছেÑএমন তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টমস গোয়েন্দা হাউসগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত ৩০ মার্চ এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সিম্ফনি) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। এডিসন গ্রুপ বিদেশ থেকে ফোনের যন্ত্রাংশ আমদানি করে দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং করে আসছে। পরে চালানটির খালাস স্থগিত করা হয়। ২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। যাতে দেখা গেছে, ঘোষণা দেয়া হয়েছে এক হাজার ২৯ দশমিক ৩৪ কেজি যন্ত্রাংশ। আর কায়িক পরীক্ষায় পাওয়া যায় এক হাজার ৬৪ দশমিক ৫৪ কেজি। ওজন ঘোষণার প্রায় কাছাকাছি পাওয়া গেলেও পার্টস ঘোষণায় অনিয়ম পাওয়া যায়। কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৫০৬.৯১.৯০ এইচএস কোডে ৪৭ দশমিক ৯৬ কেজি অ্যাডহেসিভ গ্লু (পার্টস অব অ্যাক্সেসরিজ ফর মোবাইল ফোন অ্যাডহেসিভ গ্লু) ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কায়িক পরীক্ষায় অ্যাডহেসিভ প্লাস্টিক ফিল্ম পাওয়া যায়, যার এইচএস কোড হলো ৩৯১৯.৯০.৯৯। অর্থাৎ পণ্যের মিথ্যা বর্ণনা ও এইচএস কোড দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিম্ফনির ৬০৭ দশমিক ৫ কেজি লিকুইড ক্রিস্টাল মডিউলের (এলসিএম) ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় এলসিএম ফ্লাক্সিবল প্রিন্টেড সার্কিট (এফপিসি) সংযুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী (এসআরও-১২৭/২০২১) এফপিসি ও এলসিএম সংযুক্ত অবস্থায় থাকলে সিপিসি বা রেয়াতি সুবিধা পাবে না। আবার ২৭ কেজি ক্যামেরা মডিউল এফপিসির সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এসআরও অনুযায়ী ক্যামেরা মডিউলেও রেয়াতি সুবিধা পাবে না। এলসিএম ও এফপিসি আইটেম দুটি এসআরও-তে রেয়াতি সুবিধার জন্য পৃথকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসআরও-এর শর্তাবলির অংশের ঙ-তে বলা হয়েছে, ‘প্রজ্ঞাপনের টেবিলভুক্ত একাধিক যন্ত্রাংশ সংযোজিত অবস্থায় আমদানি করা যাবে না।’ ফলে এলসিএম ও এফপিসি আইটেম দুটি এসআরও-এর শর্ত ভঙ্গ করে সংযোজিত অবস্থায় আমদানি করায় রেয়াতি সুবিধা পাবে না। ঘোষণাবর্হিভূত এবং সিপিসি সংক্রান্ত মিথ্যা ঘোষণা দেয়ায় সঠিক এইচএস কোড অনুযায়ী শুল্কায়নযোগ্য মূল্যে শুল্কায়নসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনারকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে একইভাবে যুক্ত অবস্থায় যন্ত্রাংশ আমদানি করায় ঢাকা কাস্টম হাউসে বেনলি ইলেকট্রনিক এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেডের (অপো) কয়েকটি চালান লক করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা। এছাড়া ক্যারেল কেয়ার টেকনোলজি বিডি লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি আমদানিকারকের চালান লক করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল দাখিল করা একটি বিল অব এন্ট্রিতে দেখা যায়, এডিসন লিমিটেডের মতো একই পণ্য আমদানি করেছে বেনলি, যা রেয়াতি সুবিধায় খালাস করা হবে। ওই বিল অব এন্ট্রিতে দেখা গেছে, পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৩২ টাকা। এ বিল অব এন্ট্রিতে আমদানি করা পণ্যে রেয়াতি সুবিধা নেয়া হয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। একইভাবে ৬ এপ্রিল দাখিল করা অপর একটি বিল অব এন্ট্রিতে আমদানি করা পণ্যে রেয়াতি সুবিধা নেয়া হবে প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ টাকা। বেনলি ইলেকট্রনিকের আরও কয়েকটি চালান ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে লক করা হয়েছে। এসব চালান কায়িক পরীক্ষার পর রেয়াতি সুবিধার বিষয় জানা যাবে বলে কাস্টমস গোয়েন্দার একটি সূত্র জানিয়েছে।
এনবিআর সূত্র বলছে, দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে মোবাইল ফোনের কারখানা গড়ে তুলতে করছাড় দেয় সরকার। বিশেষ করে মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়। রেয়াতি সুবিধা দিতে ২০২১ সালের ২৪ মে একটি এসআরও জারি করে এনবিআর। তবে শর্তসাপেক্ষে এ রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি শর্ত হলো- বিযুক্ত অবস্থায় যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হবে। শর্ত পরিপালন না করলে সুবিধা পাওয়া যাবে না। সে অনুযায়ী মোবাইল ফোন উৎপাদন বা সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যন্ত্রাংশ আমদানি করে আসছে। তবে অভিযোগ উঠে, কোম্পানিগুলো একটি যন্ত্রাংশের ঘোষণা দিয়ে তার সঙ্গে একাধিক যন্ত্রাংশ যুক্ত করে ঘোষণা ছাড়াই খালাস নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে রেয়াতি সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে, অপরদিকে শুল্ককর ফাঁকি হচ্ছে। কোম্পানিগুলো প্রতিটি চালানে কোটি কোটি টাকা রেয়াতি সুবিধার অপব্যবহার করছে। শুধু এলসিএমের সঙ্গে এফপিসি যুক্ত করায় এর মোট শুল্ককর দাঁড়ায় ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রায় ৩০টি চালান খালাস স্থগিত করে। ইতোমধ্যে কয়েকটির কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। যাতে রেয়াতি সুবিধার অপব্যবহারের বিষয়টি উঠে এসেছে।
এনবিআর সূত্রমতে, মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সিপিসি সুবিধার অপব্যবহার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও ব্যবস্থা নিতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এনবিআর ও কাস্টম হাউসগুলোকে চিঠি দিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, এসআরও-এর আওতায় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শর্তসাপেক্ষে যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। এসআরও-এর শর্ত ‘ঙ’ অনুযায়ী, ‘টেবিলভুক্ত একাধিক যন্ত্রাংশ সংযোজিত অবস্থায় আমদানি করা যাবে না।’ এ শর্ত থাকা সত্ত্বেও উৎপাদনকারী বা সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান একাধিক যন্ত্রাংশ সংযোজিত অবস্থায় আমদানিপূর্বক অবৈধভাবে রেয়াতি সুবিধা গ্রহণ করছে। এ জাতীয় পণ্য চালান পরীক্ষণ বা শুল্কায়নে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অজ্ঞতা বা দায়িত্বহীনতার কারণে সরকারের প্রচুর রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে এবং মোবাইল ফোন শিল্প বিকাশের প্রয়াসে জারি করা এসআরও-এর প্রকৃত কার্যরকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। আরও বলা হয়, এলসিএম ও এফপিসি আইটেম দুটি এসআরও (এসআরও নং-১২৭/২০২১) এর রেয়াতি সুবিধার জন্য পৃথক অবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে ক্যামেরা মডিউল ও এফপিসি আইটেম দুটি এসআরও-এর রেয়াতি সুবিধার জন্য পৃথক অবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইটেম চারটি (পৃথকভাবে দুইটি) একই টেবিলে পৃথকভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকায় এবং এসআরও-এর শর্ত ভঙ্গ করে সংযোজিত অবস্থায় আমদানি করায় রেয়াতি বা সিপিসি সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। রাজস্ব সুরক্ষার জন্য এসআরও-এর আওতায় পণ্য শুল্কায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ সর্তকতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে এ জাতীয় পণ্যচালান কাস্টমস গোয়েন্দার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পরীক্ষণের অনুরোধ করা হয়।
অপরদিকে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিম্ফনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়, ‘আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্থানীয় শিল্প কর্তৃক উৎপাদিত মোবাইলের যথেষ্ট চাহিদা থাকে। ২৩ মার্চ আমাদের কাঁচামাল বন্দরে আসলেও এখন পর্যন্ত কাঁচামাল ছাড় করানো সম্ভব হয় নাই। ফলস্বরূপ একদিকে সরকার যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে এই শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কারণ এই শিল্পের সব স্থানীয় উৎপাদনকারী ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এই যে, কয়েকটি স্তরে এলসিএম-এর কমপোনেন্টসগুলোকে এলসিডি অর্থাৎ এলসিডি গ্লাস (ফেস প্লেট), এফপিসি এবং এলসিডি কন্ট্রোলার (আইসি সংযুক্ত) ইত্যাদি অ্যাডহেসিভ করে ইলেকট্রনিক কনডাকশন করা হয় এবং এভাবেই এই পার্টসটি আমদানি করতে হয়। এলসিএম তৈরির মূল কয়েকটি উপাদানের একটি হচ্ছে এফপিসি এবং এই এলসিএম আমদানি করার বিধান মোবাইলের এসআরও-তে আছে। যন্ত্রাংশ বিযুক্ত অবস্থায় এই প্রোডাক্টটি আমদানি করার সুযোগ বাংলাদেশে নেই। ঠিক এমনিভাবে ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ পৃথক অবস্থায় ক্যামেরা মডিউল আমদানি করা অসমম্ভব। কারণ এফপিসি ক্যামেরা মডিউলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই আলাদাভাবে আমদানি করার সুযোগ নেই। সব নিয়ম মেনে আমদানি করা সত্ত্বেও ব্যাখ্যাগত অস্পষ্টতার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শুধু সিম্ফনি নয়, বাংলাদেশের সব মোবাইল উৎপাদনকারী বা সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য খালাস বন্ধ আছে এই ব্যাখ্যাগত জটিলতার কারণে। এ অবস্থায় যদি আমদানি বন্ধ করতে হয় তাহলে সবগুলো মোবাইল ফোন ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে।’
বক্তব্য জানতে অপোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বক্তব্যের বিষয় লিখিত আকারে দেয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসাবে, বর্তমানে দেশে ১২টি প্রতিষ্ঠানের মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনের লাইসেন্স রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফেয়ার ইলেকট্রনিক (স্যামসাং), এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজ (সিম্ফনি), আলামিন অ্যান্ড ব্রাদার্স (৫ স্টার), কার্লকেয়ার টেকনোলজি বিডি লিমিটেড (আইটেল ও টেকনো), আনিরা ইন্টারন্যাশনাল (ইউনস্টার), বেস্ট টাইকুল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (ভিভো), গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন (লাভা), বাংলাট্রিনিক টেকনোলজি (ডিটিসি), বেনলি ইলেকট্রনিক এন্টারপ্রাইজ (অপো), ওকে মোবাইল ও মাইসেল টেকনোলজি।