## ৩০ জুনের মধ্যে সব ‘ই-টিআইএন’ নিজস্ব সার্কেলে ট্রান্সফারের নির্দেশ
## ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বহু ই-টিআইএন ও ফাইল ট্রান্সফার করা হয়নি
শাহেদ রাসেল, বিশেষ প্রতিনিধি: নিজের পছন্দ মতো সার্কেলে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার দিন শেষ হচ্ছে। এখন থেকে সব করদাতাকে তার অধিক্ষেত্র (ই-টিআইএন সনদে উল্লেখিত) অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যেসব করদাতা এতদিন ভিন্ন ভিন্ন সার্কেলে রিটার্ন জমা দিয়েছেন, তাদের ফাইল অধিক্ষেত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সার্কেলে স্থানান্তর করতে বিশেষ আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অনলাইনে ই-টিআইএন নিজস্ব সার্কেলে স্থানান্তরে কর অফিসগুলোকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ আদেশ পরিপালনে ব্যর্থ হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। করদাতা ও কর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ আদেশের ফলে করদাতাদের ভোগান্তি কমবে। তবে ফাইল ট্রান্সফার দ্রুত করার দাবি জানান তারা।
জানা যায়, ১৩ জুন এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) শাহীন আক্তার সই করা একটি বিশেষ আদেশ জারি করা হয়। কর অঞ্চলের উদ্দেশ্যে জারি করা এ আদেশে করদাতার নিজস্ব সার্কেলে (ই-টিআইএন উল্লেখিত কর অঞ্চল ও সার্কেল অনুযায়ী) রিটার্ন দাখিল করার বিষয়ে সাতটি বিশেষ আদেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘কর ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনয়ন এবং সরকারের অন্যান্য দপ্তর ও অধিদপ্তরের সঙ্গে সুশৃঙ্খল অনলাইন তথ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে’-এ আদেশ জারি করা হয়েছে। ‘এই আদেশ পরিপালনের ব্যর্থতায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে’-উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন আদেশ অনুযায়ী এখন থেকে ই-টিআইএন উল্লেখিত কর অঞ্চল ও সার্কেলে বাধ্যতামূলক রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যারা নথি স্থানান্তর করতে চান, তাদের প্রথমে অনলাইনে ফাইল ট্রান্সফারের আবেদন করতে হবে। তারপর যেই সার্কেলে ই-টিআইএন নেয়া ছিল, ওই সার্কেল থেকে অনলাইনে অনুমোদন নিতে হবে। এরপর যেই সার্কেলে ফাইল ট্রান্সফার করতে চান সেই সার্কেল থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।
অপরদিকে, ১৪ জুন এনবিআরের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবা উইং থেকে সব কর অঞ্চলকে ‘অমীমাংসিত ডিজিটাল ফাইল ট্রান্সফার (ই-টিআইএন ট্রান্সফার) ও ফিজিক্যাল ফাইল ট্রান্সফার কার্যক্রম নিষ্পত্তিকরণ’ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়। যাতে বলা হয়, কর ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনায়ন এবং সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে ইনকাম ট্যাক্স অনলাইন সিস্টেমে তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের স্বার্থে এনবিআর ১৩ জুন একটি বিশেষ আদেশ জারি করে। সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে সংরক্ষিত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ‘২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত করদাতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল ফাইল ট্রান্সফার (ই-টিআইএন ট্রান্সফার) অনুরোধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে।’ ফাইল ট্রান্সফারে চিঠিতে একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। চিঠিতে ‘২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ডিজিটাল ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল এর যে যে পর্যায়ে অমীমাংসিত রয়েছে—তা ৩০ জুনের মধ্যে নিষ্পন্ন’ করার জন্য সব কর অঞ্চলের কর কমিশনারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তবে কমিশনার সার্কেল কর্মকর্তাদের এই সময়ের মধ্যে অমীমাংসিত ডিজিটাল ফাইল ট্রান্সফার সংক্রান্ত কার্যক্রম নিষ্পন্ন করার জন্য লিখিত নির্দেশনা প্রদান করবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
কর বিভাগ বলছে, ই-টিআইএন-এ উল্লেখিত সার্কেল হলো করদাতার জন্য নির্ধারিত কর অফিস। সেই অফিসেই রিটার্ন দিতে হবে, এটাই আইন; যা আগেই থেকেই ছিল। কিন্তু করদাতা ও তাদের প্রতিনিধিরা এটা সহজে মানতে চান না। নির্ধারিত সার্কেলে রিটার্ন দিতে বললেই হয়রানির অভিযোগ তোলেন। কিন্তু এতে কর অফিসগুলো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে পারেন না। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ই-টিআইএন যে সার্কেলে সে সার্কেল দেখতেছে করদাতার নামে গাড়ি নিবন্ধিত আছে। অফিস খুঁজে দেখা গেল করদাতা কখনোই রিটার্ন দেননি। করদাতাকে নোটিশ করা হলো। জবাবে করদাতা জানালেন, তিনি রিটার্ন দাখিল করেছেন এবং সেটার প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের ফটোকপিসহ একটা জবাব দিলেন। প্রাপ্তি দেখে তো বোঝা যাবে না রিটার্নে গাড়ি প্রদর্শন আছে কি না। করদাতা যেহেতু রিটার্ন দিয়েছেন, সেহেতু তিনি কর অফিসকে বলেন, আমার কাছে রিটার্নের কপি নেই। আপনারা সংগ্রহ করে দেখেন গাড়ি দেখিয়েছি কি না। জটিলতা এভাবেই শুরু হয়।
আবার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেও। কর অফিস তথ্য পেল যে করদাতার বিপুল পরিমাণ সঞ্চয়পত্র আছে। করদাতাকে নোটিশ করা হলে তিনি আগের মতোই জবাব দিলেন। কিন্তু রিটার্ন এর কপি দেননি। পরবর্তীতে আবার নোটিস করা হলে করদাতা হয়রানির অভিযোগ তুলে কর কর্মকর্তাদের চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। অন্যদিকে, অনেক করদাতা সম্পদ গোপন করতে ভিন্ন ভিন্ন সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়ম রোধে এনবিআর এই আদেশ জারি করেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। একাধিক কর অঞ্চলের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এনবিআরের আদেশ পাওয়ার পরপরই অনলাইনে পেইন্ডিং থাকা আবেদন নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। যেসব করদাতা ই-টিআইএন নেয়ার সময় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিয়েছেন, তারা অনলাইনে প্রবেশ করে চেক করতে পারবেন।
অন্যদিকে, করদাতাদের অভিযোগ, ই-টিআইএন ও কর ফাইল ট্রান্সফারে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। কর অফিসের অবহেলার কারণে আবেদন করার পরও বছরের পর বছর অনলাইনে ই-টিআইএন-এ সার্কেল সংশোধন ও ফাইল ট্রান্সফার করা হয় না।