** রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রিটার্ন দাখিলের সময় একমাস বাড়বে!
** এফবিসিসিআই বলেছে একমাস, ট্যাকসেস বার বলছে দুই মাস সময় বাড়াতে
** নতুন আয়কর আইন ও দেরিতে পরিপত্র জারি করায় করদাতাদের প্রস্তুতি প্রয়োজন
বার্তা প্রতিবেদক: ৩৯ বছর পর সম্প্রতি পাস হয়েছে নতুন আয়কর আইন। ফলে নতুন আইন সম্পর্কে জানতে ও অভ্যস্থ হতে করদাতাদের সময় লাগবে। এছাড়া প্রতিবছর আগে আগে আয়কর পরিপত্র জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এবার পরিপত্র জারি হয়েছে অনেক দেরিতে। একদিকে নতুন, অন্যদিকে দেরিতে পরিপত্র প্রকাশ। এতে করদাতাদের নতুন আইনের অনেক বিষয় বুঝতে ও হিসাব মেলাতে সময় লাগবে। আবার বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে করদাতারা অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছেন। চলছে নির্বাচিত প্রস্তুতি। যার ফলে নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অনেক করদাতা ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না। এজন্য রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা এক মাস বৃদ্ধির জন্য এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। একইসঙ্গে সময় দুইমাস বৃদ্ধির জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে আয়কর আইনজীবীদের সংগঠন ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন। সম্প্রতি দুই সংগঠন থেকে পৃথক চিঠি দেয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রমতে, এনবিআর সময় বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা করছে। তবে পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। নতুন আয়কর, দেরিতে পরিপত্র জারি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সময় একমাস বাড়তে পারে বলে এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও সূত্র বিজনেস বার্তাকে জানিয়েছেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন। সময় বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নতুন আয়কর আইন-২০২৩ প্রতিপালন ও আয়কর পরিপত্র বিলম্বে প্রকাশের কারণে এবার কারদাতারা প্রস্তুতি নেওয়ার তেমন সময় পাননি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে অনেক করদাতার পক্ষেই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব হবে না। বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন থেকে এফবিসিসিআইয়ের কাছে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আয়কর আইন-২০২৩ এর ৩৩৪ ধারার আলোকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে।
অপরদিকে, জরিমানা ব্যতীত রিটার্ন দাখিলের সময় দুই মাস বৃদ্ধির জন্য ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। গত ৮ নভেম্বর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তৌহিদ উজ্জামান খান দিপু সই করা চিঠি দেয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা ও ফার্মসমূহের ক্ষেত্রে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চলমান হরতাল-অবরোধ, আয়কর আইন-২০২৩ সম্পর্কে করদাতা ও আইনজীবীদের পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাব, ২০২৩-২৪ করবর্ষের পরিপত্র বিলম্বে প্রাপ্তি এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সকল পেশার করদাতাদের পক্ষে তাদের রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বর্তমান সরকারের গৃহীত নীতিমালা অনুসণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও সর্বোপরি করদাতাদের সুবিধার্থে জরিমানা ব্যতীত ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা ও ফার্মসমূহের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের পর আরো দুই মাস বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘আয়কর আইন-২০২৩ এর ধারা ৩৩৪’ অনুযায়ী আপনার (চেয়ারম্যান) ক্ষমতাবলে জরিমানা ব্যতীত ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা ও ফার্মসমূহের ক্ষেত্রে ৩০ নভেম্বর এরপর আরো দুই মাস বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানানো হয়। উল্লেখ্য, ধারা ৩৩৪-তে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, যে ক্ষেত্রে মহামারি, অতিমারি, দৈব দুর্বিপাক ও যুদ্ধকালীন সময় বিদ্যমান বলে সরকারের ঘোষণা বা আদেশ রয়েছে। সেক্ষেত্রে বোর্ড, জনস্বার্থে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে আদেশ জারির মাধ্যমে এই আইনের কোনো বিধান পরিপালনের সময়সীমা প্রমার্জন করতে পারবে বা পরিপালনের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে পারবে।
অপরদিকে, ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলে করদিবসের সময়সীমা দুই মাস বৃদ্ধি করে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (সিসিসিআই)। সংগঠনের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ সংগঠনের পক্ষ থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেয়া চিঠিতে বলেছেন, বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির বিরূপ অবস্থা, বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি ও আমদানি হ্রাস পাওয়াসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বিপুল সংখ্যক নতুন এবং পুরাতন করদাতাদের পক্ষে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা প্রায় অসম্ভব। তিনি ৩০ নভেম্বরের পরিবর্তে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন জমাদানের সুযোগ প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এনবিআরের কয়েকজন কর্মকর্তা বিজনেস বার্তাকে জানিয়েছেন, নতুন আয়কর আইনে কর দিবস অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন না দিলে অনেক করদাতা বেশ কিছু কর সুবিধা পাবেন না। এছাড়া রিটার্ন দাখিল না করলে, রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার বা আয়কর সনদ না থাকলে ৪৩টি সেবা নিতে পারবেন না। এজন্য গণকর্মচারীসহ সকল পেশাজীবীকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে প্রতিটি কর অঞ্চলে চলছে কর তথ্য ও সেবা মাস। করমেলার আদলে এক ছাদের নিচে করদাতারা সব কর সুবিধা পাচ্ছেন। রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এনবিআর কাজ করছে। করদাতারা ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় পান। সময়মত প্রত্যেক করদাতাকে রিটার্ন দাখিল করা উচিত।
***