রাতের ভোটের ১১৬ ডিসি-এসপি কর গোয়েন্দার জালে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে রাতের ভোটের কারিগর কুশীলব সেই ১১৬ সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) আয়কর ফাঁকি অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট (আইটিআইআইইউ)। প্রাথমিকভাবে এসব কর্মকর্তা ও তাদের আত্মীয়স্বজনের আয়কর ফাইল তলব করেছে বিশেষায়িত এই ইউনিট। অনুসন্ধানের স্বার্থে এসব কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনার পর তা স্থগিত করা হতে পারে।

সূত্রমতে, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) বিভাগওয়ারি একটি জরিপ করে। ওই জরিপে উঠে আসে, একাদশ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মাত্র ২২ আসনে জয়ী হতে পারে। জাতীয় পার্টির জয়ের সম্ভাবনা ছিল একটি আসনে। বাকি আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে প্রশাসন ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নীলনকশা আঁকেন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। তাকে সেই সময় সহায়তা করেন তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, পুলিশপ্রধান ড. জাবেদ পাটওয়ারী, সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত কর্মকর্তারা।

সূত্র আরও সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় কর্মরত এসপি-ডিসিদের তালিকা ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তার আয়কর ফাইল মাঠ পর্যায়ের কর অফিস থেকে আয়কর গোয়েন্দায় পাঠাতে বলা হয়েছে। আয়কর ফাইলে প্রদত্ত সম্পদের তথ্যের সঙ্গে তাদের সামাজিক জীবনযাত্রা মিলিয়ে দেখা হবে। অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রয়োজনে তাদের স্ত্রী, আত্মীয়স্বজনের ফাইল তলব করা হতে পারে। ২০১৮ সালে নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে ডিসি-এসপি পদে কর্মরত কর্মকর্তাদের আয়কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির তথ্যনির্ভর একাধিক অভিযোগ সম্প্রতি আয়কর গোয়েন্দায় জমা পড়েছে। তাই সে সময় কর্মরত কর্মকর্তাদের আয়কর ফাঁকি অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুরোধ জানানো হবে।
11th National Election
আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, ডিসি হিসাবে তৎকালীন দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা হলেন- ময়মনসিংহের ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, নেত্রকোনার মঈনউল ইসলাম, জামালপুরের আহমেদ কবীর, শেরপুরের আনার কলি মাহবুব, সিলেটের এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মৌলভীবাজারের মো. তোফায়েল ইসলাম, হবিগঞ্জের মাহমুদুল কবীর মুরাদ, ঢাকার আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, গাজীপুরের ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, নারায়ণগঞ্জের রাব্বী মিয়া, মুন্সীগঞ্জের সায়লা ফারজানা, কিশোরগঞ্জের মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, টাঙ্গাইলের মো. শহীদুল ইসলাম, নরসিংদীর সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, মাদারীপুরের মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, শরীয়তপুরের মো. কাজী আবু তালেব, ফরিদপুরের উম্মে সালমা তানজিয়া, মানিকগঞ্জের এসএম ফেরদৌস, গোপালগঞ্জের মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, রাজবাড়ীর মো. শওকত আলী, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, রাঙামাটির একেএম মামুনুর রশিদ, বান্দরবানের মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ির মো. শহিদুল ইসলাম, কক্সবাজারের মো. কামাল হোসেন, লক্ষ্মীপুরের অঞ্জন চন্দ্র পাল, চাঁদপুরের মো. মাজেদুর রহমান খান, ফেনীর মো. ওয়াহিদুজ্জামান, নোয়াখালীর তন্ময় দাস, কুমিল্লার মো. আবুল ফজল মীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হায়াত-উদ-দৌলা খান, রাজশাহীর এসএম আব্দুল কাদের, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এজেডএম নুরুল হক, নওগাঁর মো. মিজানুর রহমান, নাটোরের মো. শাহরিয়াজ, পাবনার জসিম উদ্দিন, বগুড়ার ফয়েজ আহমেদ, সিরাজগঞ্জের কামরুন নাহার সিদ্দীকা, জয়পুরহাটের মোহাম্মদ জাকির হোসেন, খুলনার মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, বাগেরহাটের তপন কুমার বিশ্বাস, সাতক্ষীরার এসএম মোস্তফা কামাল, যশোরের মো. আব্দুল আওয়াল, মাগুরার মো. আলী আকবর, ঝিনাইদহের সরোজ কুমার নাথ, নড়াইলের আনজুমান আরা, কুষ্টিয়ার মো. আসলাম হোসেন, মেহেরপুরের মো. আতাউল গনি, চুয়াডাঙ্গার গোপাল চন্দ্র নাথ, বরিশালের এসএম অজিয়র রহমান, ঝালকাঠির মো. হামিদুল হক, পিরোজপুরের আবু আহমেদ সিদ্দিকী, পটুয়াখালীর মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, বরগুনার কবীর মাহমুদ, ভোলার মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দীক ও রংপুরের এনামুল হাবীব।

পুলিশ সুপাররা হলেন-পঞ্চগড়ের তৎকালীন পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা পিপিএম, ঠাকুরগাঁওয়ের উত্তম প্রসাদ পাঠক, দিনাজপুরের শাহ ইফতেখার আহমেদ, নীলফামারীর মোহাম্মদ গোলাম সবুর পিপিএম, লালমনিরহাটের মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রংপুরের ফেরদৌস আলী, গাইবান্ধার কামাল হোসেন, জয়পুরহাটের মোহাম্মদ নূরে আলম, বগুড়ার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাইদুল হাসান, নওগাঁর মুহাম্মদ রাশিদুল হক, রাজশাহীর সাইফুর রহমান, নাটোরের তারিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের আরিফুর রহমান, পাবনার আকবর আলী মুনশি, মেহেরপুরের রাফিউল আলম, কুষ্টিয়ার এএইচএম আব্দুর রকির, চুয়াডাঙ্গার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঝিনাইদহের আজিম উল আহসান, মাগুরার মশিউদ্দৌলা রেজা, নড়াইলের সাদিয়া খাতুন, বাগেরহাটের আবুল হাসনাত খান, খুলনার সাঈদুর রহমান পিপিএম, সাতক্ষীরার আবদুস ছালাম, পটুয়াখালীর সাইদুল ইসলাম, ভোলার মাহিদুজ্জামান, বরিশালের ওয়াহিদুল ইসলাম বিপিএম, ঝালকাঠির মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল। এছাড়া পিরোজপুরের মোহাম্মদ শফিউর রহমান, গোপালগঞ্জের আল-বেলি আফিফা, মাদারীপুরের মাসুদ আলম বিপিএম-পিপিএম, শরীয়তপুরের মাহবুবুল আলম, ফরিদপুরের মো. শাহজাহান পিপিএম, রাজবাড়ীর জিএম আবুল কালাম আজাদ, মানিকগঞ্জের মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান পিপিএম, মুন্সীগঞ্জের মোহাম্মদ আসলাম খান, নরসিংদীর মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের গোলাম মোস্তফা রাসেল পিপিএম, ঢাকা জেলার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম, গাজীপুরের কাজী শফিকুল আলম, জামালপুরের মো. কামরুজ্জামান বিপিএম, শেরপুরের মোনালিসা বেগম পিপিএম, নেত্রকোনার ফয়েজ আহমেদ, কিশোরগঞ্জের মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম, সুনামগঞ্জের মোহাম্মদ এহসান শাহ, সিলেটের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, মৌলভীবাজারের মনজুর রহমান, হবিগঞ্জের এসএম মুরাদ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, কুমিল্লার আব্দুল মান্নান, ফেনীর জাকির হাসান, নোয়াখালীর শহীদুল ইসলাম পিপিএম, লক্ষ্মীপুরের তারেক বিন রশিদ, চট্টগ্রামের এসএম শফিউল্লাহ বিপিএম, কক্সবাজারের মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম, রাঙামাটির মীর আবু তৌহিদ বিপিএম এবং বান্দবানের সৈকত শাহীন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!