রাজস্ব হ্রাস ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ

অর্থ উপদেষ্টা-আইএমএফ বৈঠক

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের লাগামহীণ ঊর্ধ্বগতি ও রাজস্ব খাতে কর জিডিপির অনুপাত কম হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। তারা বলেছে, খেলাপি ঋণ অবশ্যই কমাতে হবে এবং কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়িয়ে নিরাপদ মাত্রায় নিতে হবে। এজন্য ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছে। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, খেলাপি ঋণ কমাতে, কর-জিডিপির অনুপাত এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর বিষয়ে তারা একমত। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে বলে বৈঠকে আইএমএফকে জানানো হয়।

রোববার সচিবালয়ে ঢাকায় সফররত আইএমএফ মিশনের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রথম বৈঠক হয়েছে। এতে আইএমএফ মিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে এদিন বৈঠকের পর আইএমএফ কোনো ব্রিফ করেনি।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফের প্রধান ফোকাস হচ্ছে খেলাপি ঋণের মাত্রা কমানো ও কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো। এ বিষয়ে আমরাও একমত। দুই বিষয়েও সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত মাত্র ৭ শতাংশ। যা নেপালের চেয়ে কম। এটি বাড়াতে হবে। তবে জনগণের ওপর চাপ না বাড়িয়ে কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়ানোর কথা বলেছে সংস্থাটি। সরকারও মনে করে রিজার্ভ আরও বাড়ানো উচিত। আইএমএফ বাজেটে ঘাটতি কমানো ও সরকারের খরচ কমানোর কথা বলেছে। বাজেট ঘাটতি কমাতে ইতোমধ্যে সরকার খরচ কমিয়েছে। যে কারণে সরকারের ঋণও কমেছে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আইএমএফ রাজস্বের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে কথা বলেছে। এ বিষয়ে সরকার চেষ্টা করছে। তবে ভ্যাট একবারে সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। তারপরও এ খাতে বেশ কিছু সংস্কার আনা হবে। আইএমএফ ঋণের কিস্তির ছাড়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী সংস্থাটি এবার দুই কিস্তির অর্থ একবারে দেবে। সংস্থাটি বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আরও বৈঠক করবে। ওইসব বৈঠকে তারা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও জানবে। এর ভিত্তিতে তারা একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করবে। তার ভিত্তিতে জুনে এ বিষয়ে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে রোববার সংস্থাটির একটি মিশন ঢাকায় এসেছে। তারা ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবেন। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মাধ্যমে তাদের মিশনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।

বৈঠকে আইএমএফ ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের মাত্রাতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতিতে ও কর-জিডিপির অনুপাত কম হওয়ার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছে। জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে যেসব লুটপাট হয়েছে ও দেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে সেগুলো এখন খেলাপি হচ্ছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এর হার কিভাবে কমানো হবে-আইএমএফ এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। নতুন আইন করা হচ্ছে। পাচার করা টাকা উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের ভেতরে যেসব ঋণ খেলাপি হয়ে আছে সেগুলোও আদায়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা বৈঠকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে যেসব খাতে কর ফাঁকি হচ্ছে সেগুলো বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়। আইএমএফ বাজেটের আকার ও বাজেট ঘাটতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে। জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজেটের আকার কমানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাজেট ঘাটতিও কমানো হচ্ছে। এ দুই খাতে সমন্বয় আনতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এদিকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্ত বৈঠক হবে ২০ এপ্রিল থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে সংস্থা দুটির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের পক্ষে হয়ে অংশ নেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ওই সময়েও সাইড লাইনে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে।

** লক্ষ্যমাত্রা কেন অর্জিত হয়নি, আইএমএফ’র প্রশ্ন
** রাজস্ব সংস্কার কৌশল দেখতে চায় আইএমএফ
** করের আওতা বাড়াতে হবে: অর্থ উপদেষ্টা
** বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের শর্ত
** আলোচনায় রাজস্ব, বিদ্যুৎ ও মুদ্রা বিনিময়

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!