রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, অব্যাহতি চাইতে হবে

বাংলাদেশ নির্ধারিত কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের সভায় এই শর্ত থেকে অব্যাহতির আবেদন জানাতে হবে। তবে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফের দেওয়া অন্যান্য সব শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ—এমন তথ্য জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ১২ থেকে ১৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে অংশ নেবে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল, যারা ঋণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবে। সম্মেলনের পর আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রো ইকোনমিক্স বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আগামী ২৯ অক্টোবর দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকা আসছে। সফরকালে তারা ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি হিসেবে প্রায় ৮০ কোটি ডলার ছাড়ের আগে জুনভিত্তিক শর্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। এ সময়ে প্রতিনিধি দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

গত ২৬ জুন চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৪ কোটি ডলার ছাড় করার পর বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করে আইএমএফ। এই প্রতিবেদনে পরবর্তী কিস্তি পেতে শর্ত ও বাংলাদেশের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, পরবর্তী কিস্তির জন্য আইএমএফ ৩৩টি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে ২১টি কাঠামোগত এবং ১২টি পরিমাণগত, যা কর্মক্ষমতার মান নির্দেশক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হওয়ায় রাজস্ব আদায়ের শর্ত নিয়ে দরকষাকষির সুযোগ থাকবে। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হবে। তাছাড়া বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনছে। এ বিষয়েও আইএমএফ প্রশ্ন তুলতে পারে। যদিও বাংলাদেশ বিনিময় হার আগের মতো নিয়ন্ত্রণ করছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে রাজস্ব আদায় ও নীতি গ্রহণে আলাদা সংস্থা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ জারিসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানা ধরনের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর অনেকগুলো ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন হয়েছে। তাই রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে ঋণ পাওয়া যাবে না, এমনটি নয়। তবে ইতোমধ্যে দুই-তিনবার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় পর্ষদে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছিল। বারবার অব্যাহতি চাওয়া সরকারের জন্য বিব্রতকর। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক শর্ত থাকলেও সব বাধ্যতামূলক নয়। যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা সাপেক্ষে অনেক কিছু মিশন কর্মকর্তারাই নিষ্পত্তি করতে পারেন। তবে কর্মক্ষমতা মানদণ্ডের শর্তগুলো পূরণ করা বাধ্যতামূলক। মিশন কর্মকর্তারা এগুলো নিষ্পত্তি করতে পারেন না। এ জন্যই আইএমএফ পর্ষদ সভায় বাংলাদেশকে এই শর্ত থেকে অব্যাহতি নিতে হবে।

পঞ্চম কিস্তি পর্যন্ত কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক ছিল না। তবে ঋণ কর্মসূচির শুরু থেকে প্রায়ই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় ষষ্ঠ কিস্তির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ কিস্তির জন্য কর্মক্ষমতা মানদণ্ডের আওতায় মোট ছয়টি শর্ত রয়েছে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী গত জুন পর্যন্ত এক বছরে মোট চার লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ সময়ে আদায় হয়েছে প্রায় তিন লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। অন্য পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে।

জুন পর্যন্ত নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দাঁড়ায় প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সরকারের অন্যান্য স্থানীয় বকেয়ার পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই সীমিত রয়েছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও বাজেট ঘাটতিও নির্ধারিত সীমার মধ্যে আছে। এছাড়া প্রাক-শর্ত, কাঠামোগত এবং নির্দেশক শর্তের প্রায় সবগুলোই পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।

** বাংলাদেশের বিদেশি ঋণে আইএমএফের সীমা নির্ধারণ
** আইএমএফের ১৩৩ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ
** আইএমএফের ১.৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন
** আইএমএফ ঋণের কিস্তির সিদ্ধান্ত আসতে পারে ৫ মে
** বাংলাদেশকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেবে আইএমএফ!
** এনবিআর চায় শর্ত শিথিল, আইএমএফ’র না
** এনবিআর চায় শর্ত শিথিল, আইএমএফ’র না
** ঋণের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার ছাড়
** ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরাই যেন ভাতা পান
** লক্ষ্য কমিয়ে সমঝোতার পথে এনবিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!