সরকারেকে বিভ্রান্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনকে বাঁধাগ্রস্ত, সরকারের নীতিতে হস্তক্ষেপ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রভাবিত করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত গবেষণা প্রকাশ করছে ইনসাইট ম্যাট্রিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইনসাইট ম্যাট্রিক্স এর ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তারা বহুজাতিক তামাক কোম্পানির হয়ে কাজ করে। বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্ক্রমকে বাধাগ্রস্থ করতে তারা তামাক কোম্পানির ব্যবস্থাপত্র অনুসারে তৈরি এই গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারা বাস্তবতা বিবর্জিত উপাত্ত প্রচার করছে।
গত ৯ জানুয়ারি ২০২৫ এনবিআর সিগারেটের সব স্তরের মূল্য ও কর হার উল্লেযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছে। অন্য সব মহলে এটি ব্যপক প্রশংসিত হলেও তামাক কোম্পানিগুলো এনবিআর এর এই উদ্যোগকে বিতর্কিত করতে রাজস্ব ক্ষতি, চোরাচালান বৃদ্ধি, ও অবৈধ সিগারেট বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। এই গবেষনা সরকারেকে বিভ্রান্ত করতে তামাক কোম্পানির ঘৃণ্য প্রপাগান্ডার অংশ। এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছে তামাক কর বিষয়ক নলেজহাব বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)।
পাশাপাশি কথিত গবেষণার সূত্র ধরে সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিভ্রান্তির অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেচলা ‘রাষ্ট্রের চতূর্থ স্তম্ভ’ গণমাধ্যমকে এমন সংবাদ প্রচারে আরো সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছে বিএনটিটিপি। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিএনটিটিপি’র প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত এক সংবাদি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কথিত গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এতে গবেষণা পদ্ধতি, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, নমুনা নির্বাচন বা এর উৎস সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই। গবেষণার সমস্ত তথ্য-উপাত্ত একটি ‘এক্সটারনাল এজেন্সি’র গবেষণার ওপর ভিত্তি করে করা। এই এজেন্সি বা সেই গবেষণার নাম এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি যা এর তথ্যের সত্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহের উদ্রেক করে। কথিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুচরা বিক্রেতাদের প্রায় ৮২ শতাংশ অবৈধ সিগারেটের নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাচ্ছেন। বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর। কারণ এসব বিক্রেতা বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো কর্তৃক নিবন্ধিত এবং সরাসরি তাদের নিয়ন্ত্রাধীন। তারা কোন সিগারেট বিক্রি করবে তা তামাক কোম্পানিগুলোই নির্ধারণ করে দেয়। এছাড়া বিএনটিটিপি’র নিয়মিত সিগারেটের বাজার মনিটরিংয়ের অভিজ্ঞতা এইতথ্যকে সমর্থন করে না।
প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছে সারা দেশে ৩৯.৬ কোটি দোকানে অবৈধ সিগারেট বিক্রি হয়। উল্লিখিত দোকান সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার দিগুনেরও বেশি। একই সাথে ঢাকায় ৬.৮ কোটি, চট্টগ্রামে ১৪.৩ কোটিসহ বিভিন্ন শহরে অবাস্তব দোকানের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে প্রদত্ত প্রায় সব তথ্যই অবিশ্বাস্য ও যৌক্তিকভাবে অসম্ভব।
উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই গবেষণায় দেশে অবৈধ তামাকের বাজার ৩১ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ভুয়া, পুনঃব্যবহৃত কিংবা সম্পূর্ণ ট্যাক্স স্ট্যাম্পবিহীন সিগারেট বাজারে সয়লাব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ এনবিআরের আটককৃত শীর্ষ ১০ পণ্যের তালিকায় সিগারেট নেই। এছাড়া জনস্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আর্ক ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত গবেষায় দেখা যায় বাজারে মোট অবৈধ সিগারেট মাত্র ৫.৬২%। এর মধ্যে অবৈধ ট্যাক্স স্ট্যাম্প ব্যবহার করেছে এমন সিগারেট মাত্র ৫.৩২%। সুতরাং দেশের বিশাল সিগারেটের বাজারের খুব সামান্য অংশ অবৈধ এবং এই অবৈধ বাণিজ্যের সঙ্গে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিই জড়িত বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর গবেষণায় দেখা গেছে, এমআরপির চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে বছরে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় তামাক কোম্পানি। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়ে চলেছে। এসব কার্যক্রমকে ব্যহত করতে অসৎ উদ্দেশ্যে তামাক কোম্পানিগুলো এমন মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। অথচ তারাই প্রতিবছর নানা কৌশলে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সিগারেটের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধির পর বিএনটিটিপি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলো তামাক কোম্পানিগুলো চোরাচালান বৃদ্ধি ও দেশে অবৈধ সিগারেটের উৎপাদন বৃদ্ধি তত্ত্ব হাজির করবে। যা বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাস্তবতা হলো বিশ্বে যেসব দেশে সিগারেটের দাম সবচেয় কম তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সিগারেটের দাম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। তাই বেশি দামের দেশ থেকে কম দামের দেশে সিগারেট চেরাচালান হয়ে আসবে এই যুক্তি টেকে না। বিইআর ও বিএনটিটিপির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের প্রায় সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে বড় তামাক কোম্পানিগুলোর নিয়মিত সংযোগ রয়েছে। ফলে সব বিক্রিয়কেন্দ্রে তাদের নজরদারি ও পর্যবেক্ষণে থাকায় নকল সিগারেট বিক্রির প্রপাগান্ডা গ্রহণযোগ্য নয়।