জুলাইয়ে কোটবিরোধী আন্দোলন ও আগস্টে হাসিনার পতনের মাধ্যমে দেশে দেড় দশকের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। এতে রাজনৈতিকভাবে মানুষ স্বস্তি পেলেও, অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দেয়। সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যয়ে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হয়, যার প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ খাতে। বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বিদ্যুৎ কেনা কমিয়ে দেয়ায়, তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলোর আয় ও মুনাফায় ধস নামে চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে।
২০২৪-২৫ হিসাববছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ইউনাইটেড পাওয়ারের আয় ও মুনাফা বেড়েছে, তবে খুলনা পাওয়ার ও জিবিবি পাওয়ারের উৎপাদন না বাড়লেও অন্যান্য খাত থেকে সামান্য আয় বৃদ্ধি পায়, যার ফলে তাদের মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে, পাঁচটি বিদ্যুৎ কোম্পানির আয় ও মুনাফা কমেছে। সামিট পাওয়ার তাদের গত ছয় মাসের হিসাব প্রকাশ করেনি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে বাড়তি সময় চেয়ে নিয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে শাহজিবাজার পাওয়ার ৬২৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৬৮৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ৬৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে ছয় মাসে কোম্পানিটির আয় সামান্য কমলেও কর-পরবর্তী মুনাফা অর্ধেকের বেশি কমেছে।জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৬১ কোটি টাকা বা আট দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং মুনাফা কমেছে ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৫৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
কোম্পানিটির ২০২৪-২৫ হিসাববছরের প্রথমার্ধে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ৪৬ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ৩৮ পয়সা। ২০২৩-২৪ হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী ১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে ১৪০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। এভাবে, কোম্পানির আয় বেড়েছে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ (৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা), এবং মুনাফা কমেছে ১ হাজার ২১০ শতাংশ (২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা)।
ছয় মাসে কোম্পানিটির আয় সামান্য বেড়েছে, তবে বড় অঙ্কের কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে। কোম্পানিটি অর্থবছরের প্রথমার্ধে শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ৯৮ পয়সা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯ পয়সা ইপিএস। ২০২৩-২৪ হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি, যদিও এর আগের অর্থবছরে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।
বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার ৬৮৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আয় ও মুনাফা যথাক্রমে ৫.০৩% ও ৯২.২৭% কমেছে। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১২ পয়সা, যেখানে আগের বছর ইপিএস ছিল ৪৭ পয়সা। ২০২৩-২৪ হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ২% লভ্যাংশ প্রদান করেছে।
বারাকা পাওয়ার ৭৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে মাত্র ৪৮ হাজার টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের বছর ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছিল। আয় ও মুনাফা যথাক্রমে ৪৩.৭৩% এবং ১০০% কমেছে। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৪ পয়সা, আগের বছর ছিল ৭৩ পয়সা। ২০২৩-২৪ সালে কোম্পানিটি ৩.৫০% লভ্যাংশ প্রদান করেছে।
ডরিন পাওয়ার ৭৮৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ৩৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ৭০৩ কোটি ২১ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে আয় বেড়েছে ৮২ কোটি ৪৭ লাখ বা ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং মুনাফা কমেছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ বা ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। কোম্পানিটি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ০১ পয়সা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল দুই টাকা ৮৩ পয়সা। ২০২৩-২৪ হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে।
জিবিবি পাওয়ারের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও অন্যান্য আয়ের মাধ্যমে ৬০ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে, আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪.৭৯ কোটি টাকার লোকসান। এই বছরে কোম্পানির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৫.৩৯ কোটি টাকা বেড়েছে। প্রথমার্ধে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৬ পয়সা, পূর্বের বছর ছিল ৪৭ পয়সা লোকসান। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি, পূর্বে ২% লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।
খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল) চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে ৮২ কোটি ২২ লাখ টাকার আয় করেছে, যার বিপরীতে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ২১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং মুনাফা ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। উৎপাদন বন্ধ থাকায় আয় কমেছে ৬২.৪৮%, তবে অন্যান্য আয়ের কারণে মুনাফা বেড়েছে ৯৩.২৫%। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বর্তমানে ৮ পয়সা, আগের বছর ছিল ৪ পয়সা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি ১০% লভ্যাংশ দিয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের আয় ও মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ব্যতিক্রমী ফলাফল দেখিয়েছে। কোম্পানিটি চলতি বছরে ২ হাজার ১০১ কোটি ৬ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ৭১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল ১ হাজার ৮৭৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং মুনাফা ছিল ৪৬২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এভাবে, কোম্পানির আয় ও মুনাফা যথাক্রমে ১১.৯০% ও ৫৩.৮০% বেড়েছে। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১২ টাকা ১১ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৭ টাকা ৮৪ পয়সা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৬০% লভ্যাংশ দিয়েছে।
সামিট পাওয়ার তার ২০২৪ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছে, যা ৩০ জুন সমাপ্ত হতে ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনও যথাসময়ে প্রকাশ হয়নি, তবে কোম্পানিটি বাড়তি সময় পেয়েছে এবং আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদনগুলো দাখিল করবে। সর্বশেষ অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত ইপিএস ছিল ২ টাকা ৪০ পয়সা, আগের বছরে যা ছিল ২ টাকা ৫ পয়সা। ২০২২-২৩ বছরে কোম্পানি ১০% লভ্যাংশ প্রদান করেছে।