রাজধানীতে ছয় মাসে ৪১৯ চাঁদাবাজির মামলা

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯ হাজার ৮৪৭টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮১২টি মামলার তদন্ত এখনও চলমান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন ৫০টি থানায় দায়ের হওয়া এসব মামলা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতি মাসে গড়ে ৭০টির বেশি চাঁদাবাজির মামলা এবং ৪৬টির বেশি ছিনতাইয়ের মামলা রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে এই চিত্র উঠে এসেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবে অনেক সাধারণ মানুষ নানা প্রতিবন্ধকতায় থানায় যেতে চান না। ফলে, বহু অপরাধ ঘটলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত হয়নি।

বাংলাদেশ পুলিশের ক্রাইম স্ট্যাটিস্টিকস অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মোট ১,১৪০টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫৪টি ডাকাতি, ৩৬টি হত্যাকাণ্ড, ৭টি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ১২৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ৩১টি অপহরণ, ৬০টি ছিনতাই, ১৪৬টি চুরির মামলা এবং অন্যান্য ৬৭৯টি অপরাধ সংশ্লিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অপরাধের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন থানায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলা দায়ের হয়েছে। জানুয়ারিতে ৫৪টি ডাকাতি, ৩৬টি খুন, ৭টি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ১২৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ৩১টি অপহরণ, ৬০টি ছিনতাই, ১৪৬টি চুরি ও আরও ৬৭৯টি অপরাধসহ মোট ১ হাজার ১৪০টি মামলা রজু হয়। একই মাসে অস্ত্র আইনে ১২টি, বিস্ফোরক আইনে ৫টি, মাদকদ্রব্য আইনে ৫৮৩টি ও চোরাচালান সংক্রান্ত ৯টি মামলা হয়। ফেব্রুয়ারিতে মোট ১ হাজার ৫৬৬টি মামলার মধ্যে ছিল ৪৬টি ডাকাতি, ৩৮টি খুন, ৯টি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ১৪২টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ১৮টি অপহরণ, ৩৬টি ছিনতাই, ১১৭টি চুরি এবং অন্যান্য ৬৩৮টি অপরাধ। এছাড়া, ওই মাসে ৮টি অস্ত্র, ১টি বিস্ফোরক, ৪৭৪টি মাদক এবং ৮টি চোরাচালান মামলাও রেকর্ড হয়। মার্চ মাসে দায়ের হওয়া ১ হাজার ৭৫৪টি মামলার মধ্যে ৩৮টি ডাকাতি, ৩৩টি খুন, ১৫টি দাঙ্গা, ১৬২টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ১৯টি অপহরণ, ৪৩টি ছিনতাই, ১৩৭টি চুরি এবং ৬৯৯টি অন্যান্য অপরাধ অন্তর্ভুক্ত ছিল। একই সময়ে মাদক ৫৩৮টি, অস্ত্র ২০টি, বিস্ফোরক ২টি এবং চোরাচালান ১০টি মামলার তথ্যও উঠে এসেছে। এপ্রিল মাসে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা কিছুটা কমলেও অপরাধের ধরণে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি—মাসটিতে ৩৭টি ডাকাতি, ২৯টি খুন, ১টি দাঙ্গা, ১৯১টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ১৯টি অপহরণ, ৪৮টি ছিনতাই, ১১৮টি চুরি এবং আরও ৫৪০টি অন্যান্য অপরাধের মামলা হয়।

এ ছাড়াও ৫টি অস্ত্র আইনে, ৬টি বিস্ফোরণ আইনে, ৫০৩টি মাদক, ২৪টি চোরাচালানসহ মোট ১ হাজার ৫৪৭টি অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গত মে মাসে ৪০টি ডাকাতি, ৩২টি খুন, ৬টি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ১৮৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ২৫টি অপহরণ, ৫০টি ছিনতাই, ১২৮টি চুরি ও অন্য আরও ৬৩০টি অপরাধের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়াও অস্ত্র আইনে ৪৪টি, বিস্ফোরক আইনে ২টি, মাদক ৫৪৬টি ও ২১টি চোরাচালানসহ মোট ১ হাজার ৭৩৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। সবশেষ গত জুনে ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানায় ৩২টি ডাকাতি, ৪৯টি খুন, ৪টি দাঙ্গা-হঙ্গামা, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৬৮টি, ২০টি অপহরণ, ৫৫টি ছিনতাই, ৯০টি চুরি ও অন্য আরও ৪৫৬টি অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়াও অস্ত্র আইনে ৪৫টি, বিস্ফোরণ আইনে ৪টি, ৫০৫টি মাদক, ১০টি চোরাচালানসহ মোট ১ হাজার ৪৫৬টি অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী এই ৬ মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অন্তত ২৯২টি মামলা হয়েছে ডিএমপি’র বিভিন্ন থানায়। এ ছাড়াও চাঁদাবাজির ঘটনায় ৪১৯টি মামলা দায়ের হয়েছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রাজধানীতে চাঁদাবাজির প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তিনি বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় এলেই আমরা তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করি। তার মতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৭০টি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে ডিএমপির বিভিন্ন থানায়। তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র আলাদাভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগ নয়, অন্য কোনো মামলায় চাঁদাবাজির ধারা যুক্ত থাকলেও সেটিকে চাঁদাবাজি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোরই রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজধানীর গুলশানে এক সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চারটি চেকে মোট ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।

কলাবাগান থানায় এই ঘটনায় একটি পৃথক মামলাও দায়ের হয়েছে। ডিএমপি’র বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মুখপাত্র। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে পুলিশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ লক্ষ্যে মহানগর এলাকায় চেকপোস্ট ও টহল তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৫০টি থানায় দুই পালায় ৪৭১টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২১২টি মোবাইল পেট্রোল টিম, ২০টি ফুট পেট্রোল এবং ২৭টি হোন্ডা পেট্রোল টিম। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ৬৬টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানের অংশ হিসেবে সাঁড়াশি অভিযানে মোট ১৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল ফোন, একটি বাস, নগদ ১৩,১৮০ টাকা ও বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ৩৩টি মামলা রুজু হয়েছে। ডিএমপি বলছে, নগরবাসীর নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে তারা সর্বোচ্চ আন্তরিক এবং সাধারণ মানুষকে সংকোচ না করে থানায় এসে সহযোগিতা নেওয়ার আহ্বান জানান কর্মকর্তারা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!