রাইস কুকার-গ্যাস স্টোভ উৎপাদনে শতভাগ কর সুবিধা

** ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেক্ট্রিক সেলাই মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, কিচেনহুড ও কিচেন নাইভস দেশে উৎপাদনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া আছে
** রাইস কুকার ও গ্যাস স্টোভ উৎপাদনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত শতভাগ কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে
** দেশের চাহিদা মিটিয়ে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে

দেশে ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত এসব পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। বিশেষ করে হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে। হোম অ্যাপ্লায়েন্সের কয়েকটি পণ্যে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বাজার সম্প্রসারণে ২০২১ সালে উৎপাদন পর্যায়ে শর্ত সাপেক্ষে শতভাগ কর অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। এবার এই তালিকায়যুক্ত হয়েছে রাইস কুকার ও গ্যাস স্টোভ। এই দুইটি হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যে শতভাগ কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলবে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যাহতি দেওয়ার ফলে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, রপ্তানিতে স্বস্তি আসবে।
IT SRO 156 page 001
সূত্রমতে, হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাত বাড়াতে ২০২১ সালের ৩ জুন শতভাগ কর অব্যাহতি দিয়ে এনবিআর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেক্ট্রিক সেলাই মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, কিচেনহুড ও কিচেন নাইভস। এই অব্যাহতির সুবিধা আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত থাকবে। চলতি বছরের ২৬ মে এই প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে রাইস কুকার ও গ্যাস স্টোভ অব্যাহতির তালিকায়যুক্ত করা হয়। আগামী ১ জুলাই থেকে যা কার্যকর হবে। তবে প্রজ্ঞাপনে অব্যাহতি সুবিধা প্রদানে অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রদান কমিটিতেও সংশোধন আনা হয়েছে।
167 page 001

সূত্রমতে, দেশীয় উৎপাদনকারী ও দেশে বিনিয়োগ উৎসাহ দিতে ২০২১ সালে হাউসহোল্ড বা গৃহস্থালি পণ্য উৎপাদনে ১০ বছরের জন্য শতভাগ কর অব্যাহতি দেয় এনবিআর। ওই বছরের ৩ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেক্ট্রিক সেলাই মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, কিচেনহুড ও কিচেন নাইভস উৎপাদন হতে অর্জিত আয়ের উপর আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছরের জন্য সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতির ক্ষেত্রে পাঁচটি শর্ত দেওয়া হয়েছে।

167 page 002
শর্তের মধ্যে রয়েছে-উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর ১৮ ধারার অধীন নিবন্ধিত হতে হবে এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক নিবন্ধিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আবশ্যিকভাবে তার নিজস্ব কারখানায় অন্যূন ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে। তৃতীয়ত, এই প্রজ্ঞাপনের অধীন অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানকে আয়কর অধ্যাদেশের বিধানাবলি পরিপালন করতে হবে। চতুর্থত, এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন হতে অর্জিত আয় ব্যতিরেকে অন্যান্য সকল প্রকার আয়ের ক্ষেত্রে এই প্রজ্ঞাপনের সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। পঞ্চমত, এসব শর্তাবলির পরিপালন এবং তফসিল মোতাবেক অনুমোদন সাপেক্ষে ২০২১ সালের ১ জুলাই হতে ২০৩০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেক্ট্রিক সেলাই মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, কিচেনহুড এবং কিচেন নাইভস-এ সকল পণ্যের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে এমন কোম্পানি এই প্রজ্ঞাপনের সুবিধা প্রাপ্য হবে।
167 page 003
তফসিল অনুযায়ী, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত অব্যাহতির সুযোগ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে এই প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত শর্তাবলি পরিপালন করার হবে মর্মে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা প্রদানপূর্বক আনুষঙ্গিক দলিলাদিসহ এনবিআরে আবেদন করতে হবে। এছাড়া কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্দিষ্ট আবেদন ফর্মের স্থানে প্রত্যয়ন এবং সই করে দুই কপি এনবিআরে দাখিল করতে হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি কোম্পানির সব তথ্য যাচাই ও পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবেন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানকে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে। কমিটির আহ্বায়ক হবেন এনবিআরের প্রথম সচিব (করনীতি), সদস্য সচিব দ্বিতীয় সচিব (কর আইন-১)। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনার ও যেকোনো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন। তবে প্রজ্ঞাপন সংশোধনের মাধ্যমে কমিটিতেও সংশোধন আনা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হবে প্রথম সচিব (কর আপীল ও অব্যাহতি) ও সদস্য সচিব দ্বিতীয় সচিব (কর অব্যাহতি)। তবে সদস্য পদে পরিবর্তন আনা হয়নি।

বাংলাদেশে তৈরি কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স পণ্যের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, গুণগতমান ও সাশ্রয়ী মূল্য জয় করে নিচ্ছে বিশ্ব ক্রেতাদের আস্থা। ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ইলেকট্রনিক্স পণ্যের নতুন রপ্তানি বাজার সৃষ্টি হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, বাংলাদেশের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি তালিকায় রয়েছে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এলইডি টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, রাইসকুকার, গ্যাস স্টোভ, ইন্ডাকশন কুকার, ফ্যান, হট প্লেট, রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসর ও কম্প্রেসরর তৈরির যন্ত্রাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের কাছ থেকে রপ্তানি প্রণোদনা ও অন্যান্য নীতি সহায়তা পেলে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ পোশাক শিল্পের মতো আরেকটি বড় রপ্তানি খাত হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডের দৌরাত্ম্য দূর করে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে নিজেদের একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দেশিয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডগুলো সামর্থ্যরে প্রমাণ দেখিয়েছে। বিশ্ব কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স বাজারে নেতৃত্ব দেয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় বেশিরভাগ গ্লোবাল ব্র্যান্ড এখন অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলোর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে ঝুকছে। এই সুযোগ লুফে নিয়ে বাংলাদেশের বিশ্ব কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স পণ্যের হাব হয়ে উঠার ব্যাপক সামর্থ্য রয়েছে।

** আয়করের ১২ এসআরও বাতিল, কি কি সুবিধা ছিলো?

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!