সারাদিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে শনিবার (২৪ মে) কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মূল কারণ ছিলো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে এনবিআরের অভ্যন্তরে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন। শনিবার বিকেলে এনবিআরের নিচে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে সকাল ৯টা থেকে এনবিআরের নিচতলায় কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য এনবিআরের অভ্যন্তরে অবস্থান নেন। যার ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়।
ঐক্য পরিষদ বলছে, চার দাবি পূরণে সরকার কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, দাবি আদায়ে রোববার (২৫ মে) ও সোমবার (২৬ মে) এনবিআর ও এনবিআরের অধীনস্থ কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিসে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। শনিবার কর্মবিরতির ফলে সারাদেশে কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিসে কোন ধরনের সেবা প্রদান ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, শনিবার সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের ভেতরে ও বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র্যাব এবং সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে, যা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে রাজস্ব আহরণ সচল রাখার স্বার্থে দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার ঘোষণা এলে আন্দোলন তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি বলেন, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত এনবিআর বিলুপ্ত হবে না মর্মে যে ঘোষণা প্রেস রিলিজে দেওয়া হয়েছে-তা সাংবাদিক মহলসহ জনমনে অহেতুক বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। জারিকৃত অধ্যাদেশের ধারা ১(২) অনুযায়ী, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সরকার পৃথক গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত এমনিতেই এনবিআর বিলুপ্ত হবে না। সেটি আলাদা করে ঘোষণা দিয়ে বলার প্রয়োজন আছে কি না সেটি আমাদের বোধগম্য হয়নি। আমাদের মৌলিক দাবি হলো-জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা; অবিলম্বে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা; রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; এবং এনবিআর কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।
সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক, যা ইতোমধ্যেই দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, থিংক ট্যাংকসহ সর্বমহলে স্বীকৃত হয়েছে। আমরা এনবিআর তথা রাজস্ব প্রশাসনের আমূল সংস্কার চাই। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আমাদের চাওয়া এই সংস্কার হবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্বীকৃত সর্বোত্তম ব্যবস্থা ও পদ্ধতির অনুরূপ। দেশের স্বার্থ ও উন্নয়ন দর্শন এতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে। রাজস্ব প্রশাসন অধিকতর কার্যকর, প্রগতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত হবে এবং সংস্কার বিশেষ কারও স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হবে না। একই সাথে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আন্তর্জাতিক উত্তম মানদন্ড অনুযায়ী আমরা চাই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তব ও পেশাগত জ্ঞানধারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের স্বার্থে আমাদের এমন যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে সরকার কেন, কী কারণে এবং কাদের প্ররোচনায় বিলম্ব করছে, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। যেহেতু আমাদের উপর্যুক্ত চারটি সুনির্দিষ্ট দাবিচ পূরণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ হতে এখনো সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করা হয়নি। সেহেতু আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূবি অব্যাহত থাকবে। ২৫ মে রোববার কাস্টম হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহ ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এদিন কাস্টম হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। ২৬ মে সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
উপকর কমিশনার মো. মোস্তফিজুর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এখনো আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা রাজস্ব যোদ্ধা। মে-জুন মাসে সরকার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ করে। আমরা ইচ্ছে করে এখানে বসিনি। আমাদের বাধ্য করা হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার পাঁয়তারা চলছে। এর জন্য আমরা দায়ী না। আমরা আসতে চাইনি। আমাদের বাধ্য করে এই পজিশনে আনা হয়েছে।
আন্দোলনে কেউ হুমকি দিয়েছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এনবিআর ভবন আমাদের নিজস্ব, আমাদের ঠিকানা। একটা বড় সময় আমি এনবিআর ভবনে কাটাবো। আজ এনবিআর ভবনের বাইরে এসে আমাদের প্রেস ব্রিফিং করতে হচ্ছে। আমাদের কেউ হুমকি দেয়নি। কিন্তু আগামীকাল থেকে যদি আমাদের বাঁধা প্রদান করা হয়, তাহলে যেখানে বাঁধা প্রদান করা হবে, সেখানে আমরা অবস্থান করবো, প্রেস ব্রিফিং করবো।
**ভ্যাট-কাস্টমস ও কর অফিসে কর্মবিরতি চলছে
**চার দাবিতে অনড়, প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি
**অধ্যাদেশ সংশোধন করে এনবিআর ভাগ হবে: অর্থ মন্ত্রণালয়
**চেয়ারম্যানের অপসারণসহ ‘অসহযোগ’ কর্মসূচি
**অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সভা ফলপ্রসূ হয়নি: ঐক্য পরিষদ
**‘এনবিআর নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি দূর হয়েছে’
**উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক মঙ্গলবার, কর্মসূচি স্থগিত
**অধ্যাদেশ বাতিল না হলে কলম বিরতি চলমান থাকবে
**এনবিআর বিলুপ্ত: অধ্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
**এনবিআর সংস্কার: আলোচনায় রাজি অর্থ উপদেষ্টা
**রোববার ৬ ঘণ্টা কলম বিরতি, আলোচনায় রাজি
**তৃতীয় দিনেও চলছে কলমবিরতি
**তিন ঘণ্টার কলম বিরতি, স্থবির রাজস্ব কার্যক্রম
**‘পরিকল্পনা ছাড়া এনবিআর ভাঙা অস্থিরতা তৈরি করেছে’
**এনবিআর অচলাবস্থা, সমাধানে সরকারের তৎপরতা
**কর-কাস্টমস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনে গণপদত্যাগ
**কোন আন্তর্জাতিক মডেলে এনবিআর সংস্কার?