রপ্তানির ছলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে তৈরি পোশাক খাতভুক্ত প্রতিষ্ঠান ফ্যাশন কমফোর্ট লিমিটেড। এ অর্থপাচারে সহযোগিতার অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার এক্সিম ব্যাংককে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নির্ধারিত জরিমানার অর্থ পরিশোধে এক্সিম ব্যাংক উদ্যোগ না নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত তাদের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ এক বিশেষ তদন্তে এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মাধ্যমে এ অর্থপাচারের ঘটনা সম্প্রতি চিহ্নিত করে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মাধ্যমে ফ্যাশন কমফোর্ট লিমিটেড মোট ৪৬টি বিক্রয় চুক্তির ভিত্তিতে ১৬১টি রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ২৬ লাখ ২৯ হাজার মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এসব রপ্তানিতে প্রতি ইউনিট তৈরি পোশাকের মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ৭৮ টাকা, যা প্রকৃত মূল্যের তুলনায় ১০ থেকে ১২ গুণ কম। তদন্তে আরও জানা গেছে, এসব রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেশে আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ২৮ লাখ ২৯ হাজার ডলার। ফলে ফ্যাশন কমফোর্ট লিমিটেড পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে পাচার করেছে প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৮১ কোটি টাকা।
তবে শুধু রপ্তানিমূল্য কম দেখানো নয়, ওভার শিপমেন্টের মাধ্যমে পোশাকের সঙ্গে অন্য পণ্য রপ্তানির অভিযোগও উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানির সময় প্রতিটি গার্মেন্টস পণ্যের ওজন ৯৮০ গ্রাম দেখানো হয়, অথচ সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে প্রকৃত ওজন তার তুলনায় তিন থেকে চার গুণ কম।
একটি পণ্যের বিপরীতে তিন থেকে চারটি অতিরিক্ত পণ্য রপ্তানি করেছে ফ্যাশন কমফোর্ট লিমিটেড। এই কৌশলে রপ্তানির আড়ালে প্রতিষ্ঠানটি পাচার করেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপুল অঙ্কের এই অর্থপাচারের তথ্য এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করেনি।
এ কারণে চলতি বছরের ১৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ। একই দিনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে জরিমানার অর্থ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এক মাসের মধ্যে কোনো সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল এক্সিম ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষিত রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে জরিমানার অর্থ কেটে নেওয়া হয়।
অর্থ পাচারে সহায়তাকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে এক্সিম ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আজিজকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।