বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস যানবাহনের ধোঁয়া। মোট দূষণের প্রায় ২৮ শতাংশের জন্য দায়ী গাড়ি। এরপর কারখানা, ইটভাটা ও নির্মাণকাজের ধুলোবালি বড় অবদান রাখছে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পর্যটন ভবনে আয়োজিত এক গণশুনানিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘বায়ুদূষণ প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এ শুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এতে ভুক্তভোগী নাগরিকসহ চিকিৎসক, পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, গবেষক, আইনপ্রণেতা এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
শুনানিতে বেলা জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বে বায়ুদূষণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। বেলার উপস্থাপনায় দেখা যায়– যানবাহনের ধোঁয়া ২৮ শতাংশ, কারখানা ১৩ শতাংশ, ইটভাটা ১১ শতাংশ এবং নির্মাণ প্রকল্পের ধুলোবালি ৮ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। বাকি অংশ আসে আবর্জনা পোড়ানো, গৃহস্থালির ধোঁয়া ও জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার থেকে।
এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাসিন্দাদের গড় আয়ু প্রায় সাত বছর কমেছে। ঢাকার বাইরে এ হার ৬ দশমিক ২ বছর এবং সারাদেশে গড়ে ২ দশমিক ৪ বছর। স্বল্পমেয়াদি প্রভাবে বায়ুদূষণ কাশি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, চোখের প্রদাহ, অ্যালার্জি ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ—ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, আলঝেইমার, পারকিনসন্স, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, বন্ধ্যত্ব এমনকি ত্বকের ক্যান্সারের মতো জটিল অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সম্প্রীতি ইসলাম বলেন, একজন মানুষ প্রতিদিন ১৬ কেজি বাতাস গ্রহণ করেন। বাতাসের ক্ষুদ্র কণা শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে নানা রোগের ঝুঁকি তৈরি করছে। তাই বাতাস রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, আমাদের পরিবেশ রক্ষায় দুই শতাধিক আইন আছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০২২– সবই কাগজে-কলমে আছে। প্রশ্ন হলো, বাস্তবে কাজ হচ্ছে না কেন? তাঁর মতে, কারিগরি সীমাবদ্ধতা, জনবল সংকট, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের ওভারল্যাপের কারণে আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক নাজনিন হোসেন জানান, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এক হাজার ১০০ গাড়ি ডাম্প করা হয়েছে; মামলা হয়েছে ১৮ হাজার; জরিমানা আদায় হয়েছে ১০ কোটি টাকা।
গণশুনানিতে বিশেষজ্ঞ ও অংশগ্রহণকারীরা জানান, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগ, সমন্বিত পদক্ষেপ, শিল্প-কারখানার আধুনিকায়ন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, অন্তত ১৫টি মন্ত্রণালয় সরাসরি এ খাতের সঙ্গে যুক্ত, তবে কার্যকর সমন্বয়ের অভাবই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, শুধু সরকার নয়, জনগণকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
** বায়ুদূষণে গড় আয়ু কমছে সাড়ে পাঁচ বছর
** বায়ুদূষণ কমাতে এয়ার পিউরিফায়ারের শুল্ক কমলো
** দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা তৃতীয় স্থানে
** টানা তিন দিন দূষণের শীর্ষে ঢাকা