প্রবাসী যাত্রীর একটি সোনার বার চুরি করে চাকরিচ্যুত বা চাকরি হয়েছেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পিংকু রায়। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা আদেশ জারি করা হয়েছে। পিংকু রায় ঢাকা কাস্টম হাউসের আওতাধীন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সি-শিফট ট্রানজিট ও মূল্যবান গুদামে ‘গুদাম কর্মকর্তা’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত থাকাবস্থায় ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রবাসী এক যাত্রীর একটি স্বর্ণবার গুদামে জমা না দিয়ে চুরি করে নিয়ে যান।
সূত্রমতে, ২৩ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) সকাল ৬টা ২০ মিনিটে যাত্রী বেসরকারি ইউএস বাংলার বিএস-৩৪২ ফ্লাইট যোগে দুবাই থেকে মহিবুর রহমান নামে একজন যাত্রী শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর বিমানবন্দর থেকে সকল মালামাল সংগ্রহ করে সাথে গোল্ডবারের শুল্ক পরিশোধ করে (১১৬ গ্রাম সোনার বার) ক্যানোপি ২ নম্বর দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যান। এরপর যাত্রী বুঝতে পারেন তার সাথে প্যান্টের মধ্যে থাকা সোনার বারটি নেই। এরপর যাত্রী মহিবুর এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে একটি অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এপিবিএন বিমানবন্দরের সকল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। এতে দেখা যায়, যাত্রী মহিবুরের সোনার বারটি কাস্টমসের গ্রীন চ্যানেলের স্ক্যানিং মেশিনের সামনে ফ্লোরে পড়ে ছিলো। এরপর কাস্টম কর্মকর্তা পিংকু রায় সোনার বারটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে পা দিয়ে লাথি মেরে একপাশে সরিয়ে রাখেন। এরপর সুকৌশলে সোনারবারটি পকেটে তুলে নেন পিংকু রায়। যিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে মূল্যবান গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি দ্রুত বিমানবন্দর ত্যাগ করে বাসায় চলে যান।
এরপর এপিবিএন কর্মকর্তারা কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে পিংকু রায় এপিবিএন অফিসে আসেন। পরে এপিবিএনের জিজ্ঞাসাবাদে কাস্টমস কর্মকর্তা অভিযোগকারীর হারানো সোনার বারটি অসৎ উদ্দেশ্যে নেওয়ার কথা জবানবন্দিতে বলেন এবং লিখিত দেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা সরকারি চাকুরীজীবী হওয়ায় বিষয়টি কাস্টমসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনারের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দারের জিম্মায় এপিবিএন অফিস থেকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নিমিত্তে হস্তান্তর করা হয়। এরপর উদ্ধার করা সোনার বারটি অভিযোগকারী যাত্রী মহিবুর রহমানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যার ওজন ১১৬ গ্রাম। বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। পরে ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিংকু রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অপরদিকে, আদেশে বলা হয়েছে, পিংকু রায় সি-শিফটে ট্রানজিট ও মূল্যবান গুদামে ‘গুদাম কর্মকর্তা’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় যাত্রীর স্বর্ণবার আত্মসাৎ করেন। পরে তার বিরুদ্ধে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত হয়, একইসঙ্গে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগনামা প্রেরণ করে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হলে তিনি লিখিত জবাব দেন। একইসঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক বলে উল্লেখ করেন। পরে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। শুনানি শেষে তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে পিংকু রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে গুরুদণ্ড প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পরে কেন চাকরি হতে বরখাস্ত ও গুরুদণ্ড দেওয়া হবে না-সে বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। তিনি জবাব দাখিল করেন এবং শুনানিতে অংশ নেন। পরে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন পিংকু রায়ের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী সর্বোচ্চ দণ্ডারোপ করার পরামর্শ প্রদান করেন। ফলে পিংকু রায়ের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী, অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী তাকে চাকরি হতে বরখারস্ত করা হলো।