রেল খাতে অনিয়ম ও লুটপাটের যেসব অভিযোগ এসেছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এর বিরুদ্ধে তার তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। গত মঙ্গলবার তিনি রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামকে এ নির্দেশ দেন। লিখিত নির্দেশ পাওয়ার পরে রেল সচিব ম্যাক্সের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে একটি ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি রেল মন্ত্রণালয়ের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের করা সকল প্রকল্পের কাগজপত্র সংগ্রহ করছেন। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে ম্যাক্সের বড় প্রকল্পগুলোর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কি ধরনের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন সেগুলো চাওয়া হয়েছে। গত ১১ই মার্চ রেল সেক্টরের নজিরবিহীন অনিয়ম অসঙ্গতি নিয়ে ‘রেলের মাফিয়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরে রেল ভবনে ম্যাক্সের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযান শেষে তারা রেলের কয়েকটি প্রকল্পে বিপুল অনিয়মের তথ্য পান। অভিযান শেষে সংস্থাটি জানিয়েছে, অভিযানকালে দুদক বাংলাদেশ রেল খাতের অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার কর্তৃক বাস্তবায়িত চিনকি আস্তানা-আশুগঞ্জ ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ সংস্কার প্রকল্প, দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ ও আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে।
প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রের তাৎক্ষণিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রায় ২৯৯ কোটি টাকার চিনকি আস্তানা-আশুগঞ্জ প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা চাহিদা ছিল বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ কিমি রেলপথ নির্মাণ ও ১১০ কোটি টাকার একই কাজ সম্পাদনা এবং ১৪০ কোটি টাকার বার্ষিক টার্নওভার। অন্যদিকে, প্রায় ৬২৮ কোটি টাকার কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে যোগ্যতা ছিল বিগত ১০ বছরে একই প্রকৃতির ২০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের দুটি চুক্তির কার্য সম্পাদন, যার মূল্যমান ৩০০ কোটি টাকা ও যেকোনো তিন বছরের ৩০০ কোটি টাকার বার্ষিক টার্নওভার। বর্ণিত কাজ দুটি এককভাবে পায় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। কিন্তু সে সময়ে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক যোগ্যতা চুক্তি অনুযায়ী না থাকার প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
সার্বিক পর্যালোচনায় ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটিতে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া আখাউড়া-লাকসাম ও দোহাজারি-কক্সবাজার প্রকল্পসহ ম্যাক্স গ্রুপের অন্যান্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়েছে দুদক।
সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, রেলের মাফিয়া শিরোনামে প্রকাশিত নিউজটি আমার নজরে এসেছে। পরে আমি রেল সচিবকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি। তদন্ত করে কোনো অনিয়ম পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। দ্রুতই ফলাফল জানতে পারবেন।