কৃষিপ্রধান জেলা মেহেরপুরে কৃষকরা তীব্র রাসায়নিক সারের সংকটে পড়েছেন,কারণ সরকার কৃষকদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে সার সরবরাহ করলেও বেশিরভাগ সার ব্যবহার হচ্ছে তামাক চাষে।এর ফলে অন্যান্য ফসল চাষের জন্য কৃষকরা প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না,যা তাদের উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করছে।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,তামাক চাষে অন্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি সার প্রয়োজন,তবে তামাক উৎপাদনের জন্য সরকারি ভর্তুকির সার বরাদ্দ নেই।তামাক কোম্পানিগুলো আগে সার সরবরাহ করত,এখন কৃষকদের নগদ টাকা দিচ্ছে,ফলে সরকারি ভর্তুকির সার তামাক চাষে চলে যাচ্ছে।এর কারণে অন্য ফসলের জন্য বাজারে সার,বিশেষত ডিএপি সারের সংকট তৈরি হয়েছে।তামাক চাষে অনেক বেশি সার ব্যবহারের কারণে সবজিসহ অন্য ফসলের সার পেতে কৃষকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
গাংনী উপজেলার কৃষক জহুরুল ইসলাম ৬ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন,তবে সারের অভাবে তিনি প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না। তিনি মাত্র ৪ বস্তা টিএসপি,১ বস্তা ইউরিয়া ও ১ বস্তা এমওপি সার কিনতে পেরেছেন,ফলে ফুলকপি সময়মতো বড় হচ্ছে না এবং তার বড় লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।
একই এলাকার কৃষক মোফাজ্জেল হোসেন ১১ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছেন। তিনি দুটি তামাক কোম্পানির তালিকাভুক্ত চাষি,তবে কোম্পানি থেকে শুধু রাসায়নিক সার হিসেবে সালফেট অব পটাশ (এসওপি) ও অন্যান্য সার কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। তার জমিতে ১১০ বস্তা ডিএপি, ২২ বস্তা এমপি,২২ বস্তা ইউরিয়া ও ১১ বস্তা সালফেট প্রয়োজন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,চলতি মৌসুমে ১৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা,১ হাজার ৩৬৫ হেক্টরে গম,১৯ হাজার ২৬৫ হেক্টরে বোরো ধান,৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টরে পেঁয়াজ ও ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছে।এর বিপরীতে চলতি মাসে বিএডিসি ও বিসিআইসি থেকে জেলায় ৩ হাজার ৯৬৪ মেট্রিক টন ইউরিয়া,১ হাজার ৭৮১ মেট্রিক টন টিএসপি,২ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন ডিএপি ও ১ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন এমওপি বরাদ্দ রয়েছে।
এদিকে জেলায় এ বছর ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ চলছে,যা গত বছরে ছিল ২৬ হাজার হেক্টর।এর বিপরীতে কোনো ভর্তুকির সার বরাদ্দ নেই।
সদর উপজেলার বিসিআইসির ডিলার মিরাজুল হক বলেন,কৃষকরা সবজি চাষের নামে ডিএপি সার তামাক চাষে ব্যবহার করছে,যার ফলে ডিএপি সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন,তামাক চাষে অনেক বেশি সার ব্যবহারের কারণে সবজিসহ অন্য ফসলের সার পেতে কৃষকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
একটি বিদেশি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন,তামাক চাষে সুবিধা দিতে কোম্পানি কৃষকদের জন্য এসওপি সার আমদানি করে সরবরাহ করে,এবং ডিএপি,এমওপি,ইউরিয়া,জিপসাম সার বাইরে থেকে কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয়।
জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন,মেহেরপুরে তামাক চাষের কারণে সারসংকট তৈরি হচ্ছে,কারণ তামাক চাষে বেশি সার ব্যবহার হয়। এতে অন্যান্য ফসলের জন্য কৃষকদের সার পেতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করলে সারসংকট সমাধান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃঞ্চ হালদার বলেন,তামাক চাষ কৃষিজমি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি এবং কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়।