মুন্নী সাহার পরিবার-প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথি তলব

অর্থপাচারের অভিযোগ

** মুন্নী সাহা, তার স্বামী কবির হোসেন, মা আপেল রানী সাহা, ভাই তপন কুমার সাহার আয়কর নথি তলব করা হয়েছে
** মুন্নী সাহা ও তার স্বামীর মালিকানাধীন বাংলাদেশ ইভেন্টস, এক টাকার খবর, প্রোমোশন, এড হেডকোয়ার্টার এর আয়কর নথি তলব করা হয়েছে

আলোচিত সাংবাদিক মুন্নী সাহা। অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে মুন্নী সাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। শুধু অস্বাভাবিক লেনদেন নয়, এই সাংবাদিক ও তার পরিবার এবং তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগও রয়েছে। অর্থপাচার অনুসন্ধান শুধু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরই অংশ হিসেবে মুন্নী সাহা, তার স্বামী, মা, ভাই এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথি চাওয়া হয়েছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ থেকে আয়কর নথি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এই চিঠি দেওয়া হয়। মুন্নী সাহা ছাড়াও তার স্বামী কবির হোসেন তাপস, মা আপেল রানী সাহা, ভাই তপন কুমার সাহার আয়কর নথি চেয়েছে। একইসঙ্গে এই সাংবাদিকের পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইভেন্টস, এক টাকার খবর, প্রোমোশন, এড হেডকোয়ার্টারের আয়কর নথি চাওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সিআইডির চিঠিতে বলা হয়েছে, আলোচিত সাংবাদিক মুন্নী সাহাসহ তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থপাচার করার প্রাথমিক অভিযোগ রয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী মুন্নী সাহাসহ তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য মুন্নী সাহা ও তার প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথি প্রয়োজন। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অসহযোগিতা বা অস্বীকৃতির দায়ভার মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী-২০১৫) এর ৭(২) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে মুন্নী সাহা ছাড়াও তার স্বামী হিসেবে পরিচয় দেওয়া মো. কবির হোসেন তাপস, মা আপেল রানী সাহা, ভাই তপন কুমার সাহার নথি চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মুন্নী সাহার মালিকানাধীন তেজগাঁও লিংক রোডের রোজাগ্রীণের ঠিকানায় অবস্থিত ‘বাংলাদেশ ইভেন্টস’ এবং গুলশানের বসতি ড্রিমে অবস্থিত ‘এক টাকার খবর’র আয়কর নথি চাওয়া হয়েছে। তেজগাঁও লিংক রোডের শান্তিনিকেতনে ১৬৫, রোজাগ্রীণে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে তার। এছাড়া নিউ ইস্কাটনের ৮৫/১ এর ঠিকানায় অবস্থিত ‘এমএস প্রমোশন’ এবং ‘এড হেডকোয়ার্টার’ এর আয়কর নথি তলব করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক কবির হোসেন তাপস।

সূত্রমতে, সাংবাদিক মুন্নী সাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে বেতনের বাইরে জমা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় ১২০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। স্থগিত করা হিসাবে স্থিতি আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা। মুন্নী সাহা, তার স্বামী কবির হোসেন তাপস এবং তাদের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের হিসাবে এই অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ ছাড়া গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোড এলাকায় শান্তিনিকেতনে ১৬৫, রোজাগ্রীণে তাদের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান মিলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধান বলছে, বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেনের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের নামে ২০১৭ সালের ২ মে একটি হিসাব খোলা হয়। যেখানে নমিনি হিসেবে নাম রয়েছে মুন্নী সাহার। অন্যদিকে, ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় জনৈক মাহফুজুল হকের মালিকানায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই একটি হিসাব খোলা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটি থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধ না করে বারবার সুদ মওকুফ ও নবায়ন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে কেবল ২০১৭ সালেই সুদ মওকুফ করা হয় ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। যদিও প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে পারস্পারিক ব্যবসায়িক কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বিভিন্ন তারিখে হিসাব দুটির মধ্যে বিপুল অংকের অর্থ লেনদেন হয়েছে।

অস্বাভিবক লেনদেনের দায়ে গত ডিসেম্বরে মুন্নী সাহা পরিবারের অ্যাকাউন্টে থাকা ১৪ কোটি টাকা ফ্রিজ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট–বিএফআইইউ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় এমএস প্রমোশন এবং খাতুনগঞ্জ শাখায় প্রাইম ট্রেডার্সের মধ্যে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উঠে আসে। এই দু’টি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটি থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধ না করে প্রভাব খাটিয়ে কেবল ২০১৭ সালেই সুদ মওকুফ নেওয়া হয় ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

** মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!