মুনিম-ঈদতাজুলের অনিয়মের তথ্য চায় দুদক

বড় কোম্পানিকে কর সুবিধা, অনিয়ম, দুর্নীতি

দেশের বড় গ্রুপ ও শিল্পগোষ্ঠীকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে করা হয়েছে রাজস্ব মওকুফ। করফাঁকি ও অর্থপাচারে করেছেন সহযোগিতা। হাজার হাজার কোটি টাকা অনিয়মের সুযোগ দিয়ে বিনিময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন অবৈধ সম্পদ। বড় কোম্পানিকে সুবিধা দিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক ও এনবিআরের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মে তাকে সহযোগিতা করেছেন সাবেক প্রথম সচিব (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) ঈদতাজুল ইসলাম।

এছাড়া ঈদতাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্য ও হয়রানি করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয় করার অভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনে মুনিম ও ঈদতাজুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা হওয়া অভিযোগ অনুসন্ধানে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে যেসব বড় কোম্পানিকে অনিয়মের মাধ্যমে কর মওকুফ, করফাঁকি ও অর্থপাচারে এই দুই কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছেন-সেই বড় গ্রুপ ও শিল্পগোষ্ঠীর এই সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে দুদক থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এই চিঠি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা চেয়ারম্যান মুনিম ও ঈদতাজুলের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৪ আগস্ট সরকার মুনিমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ তৃতীয়বারের মতো আরও দুই বছর বাড়ায় সরকার। যার মধ্য দিয়ে এনবিআরের ইতিহাসে টানা ছয় বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন মুনিম। দীর্ঘ সময় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের সময় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বড় কোম্পানি ও শিল্পগোষ্ঠীকে হাজার হাজার কোটি টাকার অনৈতিক কর সুবিধা ও করফাঁকিতে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠে মুনিমের বিরুদ্ধে।

অপরদিকে, সম্প্রতি দুদক থেকে তথ্য চেয়ে বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও সাবেক প্রথম সচিব (বর্তমানে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে কর্মরত) ঈদতাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ দুদকের কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। কমিশন উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে সদস্য করে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে দেশের কয়েকটি গ্রুপ ও শিল্পগোষ্ঠীর তথ্য চাওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এসব গ্রুপ ও শিল্পগোষ্ঠীকে শত থেকে হাজার কোটি টাকার আয়, ভ্যাট, কাস্টমস ডিউটি ফাঁকিতে সহায়তা; অবৈধভাবে রাজস্ব মওকুফ ও অর্থপাচারে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

অপরদিকে, চিঠিতে দেশের কয়েকটি বড় গ্রুপ ও শিল্পগোষ্ঠীকে কর মওকুফ ও কর সুবিধা দেওয়ার তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের তিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব মওকুফ, করফাঁকি ও টাকা পাচার সংক্রান্ত তথ্য ও নথি দুদকে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া সুকুক বন্ডে বেক্সিমকো গ্রুপের দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার ভ্যাট মওকুফ, করফাঁকি ও টাকা পাচার সংক্রান্ত তথ্য, নথি ও নোটশিট দিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে, সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বেক্সিমকা গ্রুপের করফাঁকি, রাজস্ব মওকুফ ও টাকা পাচার সংক্রান্ত যাবতীয় প্রতিবেদন, তথ্য (পৃথক পৃথক প্রতিষ্ঠানভিত্তিক) দুদকে দিতে বলা হয়েছে। আবার এসব গ্রুপ ও শিল্পগোষ্ঠীর রাজস্ব মওকুফ, করফাঁকি ও টাকা পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে এনবিআরে কোনো তদন্ত হয়ে থাকলে সে সংক্রান্ত যাবতীয় প্রতিবেদন ও তথ্য দিতে দুদকে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম-ভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী– এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ‘এসএস পাওয়ার-আই লিমিটেডকে’ দেওয়া পাঁচ বছর আগের আয়কর ছাড়ের সুবিধা বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১৯ সালের মার্চে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আয়কর) এক প্রজ্ঞাপনের অধীনে, এত দিন ধরে এসএস পাওয়ার-আই লিমিটেডকে প্রদত্ত ঋণ থেকে উদ্ভূত ফির আয়ে এ করছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এনবিআর এই আয়কর সুবিধা বাতিল সংক্রান্ত একটি সংবিধিবদ্ধ আদেশ (এসআরও) জারি করেছে। এতে জানানো হয়েছে, আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে এই কর সুবিধা আর পাবে না কোম্পানিটি। এতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি কর মওকুফ করে এনবিআর। অবৈধভাবে এই কর মওকুফ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!