মিষ্টি কুমড়া চাষে বিপাকে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের কৃষকরা। একদিকে ফলন কম, অন্যদিকে চাষাবাদের খরচের সাথে মিলছে না বিক্রি দামের হিসাব। স্থানীয় বাজার বা পাইকারি বিক্রিতে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া আকারভেদে ৬ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আমদানি বেশি থাকায় বাজারে দামের প্রভাব পড়েছে। গত বছর ১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ হলেও এ বছর ১ হাজার ২১৬ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষকেরা বলছেন, মিষ্টি কুমড়া এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর যেখানে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে কুমড়া বিক্রি করা হতো; সেখানে এ বছর ৬ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের চেয়ে বেশি দামে সার, ডিজেল, কীটনাশক কিনতে হয়েছে। একই সাথে শ্রমিকের দামও বেড়ে যাওয়ায় চাষাবাদের খরচ ওঠানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে জেলার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
জানা গেছে, তাড়াইল ও ইটনা উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বেশি হয়েছে। তার মধ্যে তাড়াইলে ৩০০ হেক্টর ও ইটনায় ২৫০ হেক্টর জমি। চাষাবাদ বেশি হলেও ফলন হয়নি আশানুরূপ। বিস্তীর্ণ এ হাওরে প্রতি বছর এ সময়ে জমির প্রায় ৬০ ভাগ কুমড়া বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর বিক্রি হয়নি। সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয়।
প্রতিদিন হাওরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নৌকায় করে ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নের শান্তিপুর হাটে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে আসেন কৃষকরা। এখান থেকে পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, পাইকগাছা, বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। যেখানে প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হতো, সেখানে এ বছর গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে।
ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার তিনটি হাওরে ১ হাজার ২০০ কাঠা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। এই চাষে খরচ হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। এখন যে দাম আছে; সেই দামে খরচ পুষিয়ে ওঠা বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া জমিগুলোতে ১৫ জন কর্মচারী কাজ করে। তাদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা। ফলন কমের পাশাপাশি দাম নিয়ে বিপাকে আছি।’
ব্যবসায়ী ও কৃষক জুম্মন বলেন, ‘আমার মাঠে ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর ৫ লাখ টাকাও আশা করতে পারছি না। এরকম ভাবে সব কৃষকের একই অবস্থা। কীটনাশক ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা হয়েছে। সার ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এ বছর। এই ফসল করে অনেক কৃষক হতাশায় আছেন। অন্য বছর যেখানে লাখ লাখ টাকা আয় হতো সেখানে এইবার লোকসান।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী আড়তদার উমর ফারুক বলেন, ‘প্রতিদিন আমার আড়ৎ থেকে ৭৫ টনের মতো মিষ্টি কুমড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। গত বছর সর্বনিম্ন ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ বছর প্রথম বাজার শুরু হয়েছে ১৭ টাকা কেজি। এখন ৬ থেকে ১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমদানি বেশি থাকায় বাজারদর কমে গেছে। এই হাটে ইটনা, কালিয়াজুড়ি এলাকা থেকে মিষ্টি কুমড়া বেশি আসে।’
মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পেলেও কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইমরুল কায়েস বলেন, এ বছর জেলায় ১ হাজার ২১৬ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ হলেও কৃষকরা মিষ্টি কুমড়ার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। অন্যান্য সবজি উৎপাদনের আধিক্য থাকায় দাম কমেছে। এছাড়া, অন্যান্য বছর বিভিন্ন জুস কোম্পানি মিষ্টি কুমড়া কিনে নিলেও এ বছর এখনো কোনো কোম্পানির দেখা মেলেনি। যদি তারা কিনে, তাহলে কৃষকরা ভালো মূল্য পাবেন।