মা ও নবজাতকের মৃত্যু; চার চিকিৎসকের সনদ বাতিল

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার চিকিৎসকের সনদ সাময়িকভাবে বাতিল করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়।

সাময়িকভাবে সনদ বাতিল হওয়া চারজন হলেন—ডা. ফৌজিয়া ফরিদ, ডা. সাওদা তাসনীম, স্বাস্থ্য সহকারী জাহেদ হাসান ও ডা. মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। এর মধ্যে ডা. ফৌজিয়া ফরিদ ও ডা. মোহাম্মদ আক্তার হোসেনের রেজিস্ট্রেশন তিন বছরের জন্য, ডা. সাওদা তাসনীমের এক বছরের জন্য এবং জাহেদ হাসানের ছয় মাসের জন্য বাতিল করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদে তারা দেশের ভেতরে কোনো ধরনের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা দিতে পারবেন না বা নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না। সিদ্ধান্তটি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে

বিএমডিসির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রসূতি উম্মে সালমা নিশির চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডা. ফৌজিয়া ফরিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ (আইন নম্বর ৬১) এর ধারা ২৩(১) এবং বিএমডিসি প্রবিধানমালা, ২০২২ এর বিধি ৩৬(৪)(খ) অনুযায়ী তার নাম রেজিস্টার থেকে প্রত্যাহার করে তিন বছরের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে।

একই অভিযোগে ডা. সাওদা তাসনীমের নাম রেজিস্টার থেকে প্রত্যাহার করে তার রেজিস্ট্রেশন এক বছরের জন্য বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী জাহেদ হাসানের রেজিস্ট্রেশন ছয় মাসের জন্য বাতিল করা হয়েছে। এই মেয়াদে তিনি তার নির্ধারিত পেশাগত দায়িত্ব পালন কিংবা নিজেকে সংশ্লিষ্ট পরিচয়ে উপস্থাপন করতে পারবেন না। একই অভিযোগে ডা. মোহাম্মদ আক্তার হোসেনের নামও রেজিস্টার থেকে প্রত্যাহার করে তার রেজিস্ট্রেশন তিন বছরের জন্য বাতিল করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর রাতে নোয়াখালীর সেনবাগ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক এম এ আউয়াল তার ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা একমাত্র মেয়ে উম্মে সালমা নিশিকে নিয়ে মাইজদীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সাউথ বাংলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। সে সময় নবজাতকের হার্টবিট ছিল ২৪১। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আক্তার হোসেন অভি ও তার স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া ফরিদ রোগীর কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এবং অভিভাবকের সম্মতি না নিয়ে সিজারিয়ান অপারেশনের উদ্যোগ নেন। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই মা ও নবজাতকের মৃত্যু ঘটে।

পরবর্তীতে ঘটনা গোপন করতে ডা. আক্তার হোসেন অভি ও ডা. ফৌজিয়া ফরিদসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়ে তাকে আইসিইউ সাপোর্টের অজুহাতে কুমিল্লায় পাঠান। ঘটনার পরদিন উম্মে সালমা নিশি ও নবজাতকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার বাবা এম এ আউয়াল আদালতে মামলা দায়ের করেন।

সাংবাদিক এম এ আউয়াল বলেন, আমার অনুমতি ছাড়াই মেয়ের অপারেশন করা হয়েছিল, যার ফলে আমার মেয়ে ও নবজাতকের মৃত্যু হয়। আমি প্রথমে মৌখিকভাবে এবং পরে ২৩ অক্টোবর সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের শরণাপন্ন হই। একজন শোকাহত বাবা হিসেবে আমি আমার মেয়ে ও নাতির মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছিলাম। কিন্তু অভিযুক্ত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী ও সম্পদশালী হওয়ায় আমি বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!